প্রকাশিত: ১৮ ঘন্টা আগে, ০৫:৪৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

হাটহাজরীতে গণধোলাইয়ের শিকার শ্রমিকদল নেতা শ্রীঘরে, অব্যাহতি যুবদল নেতার



মোঃ একরামুল হক
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, পাহাড় ও গাছ কাটা, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শ্রমিকদল ও যুবদলের একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে জনতা। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকদলের ইউনিয়ন আহ্বায়ক আব্দুল মান্নানকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন তিনজন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রমিকদল নেতা আব্দুল মান্নান ও যুবদল নেতা জাকিরের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ছিল। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, পাহাড় কাটা, এমনকি মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলের মতো গুরুতর অপরাধেও তারা জড়িত। প্রায় ৮-৯ মাস ধরে তাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে ১০ জুন রাতে, মসজিদ কমিটি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মান্নানদের কথাকাটাকাটির মধ্য দিয়ে। একপর্যায়ে মান্নান ও তার সহযোগীরা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ দুই কিশোর সাকিব (১৬) ও কামরুল (১৫)-কে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পরদিন ১১ জুন সকালে স্থানীয় গণ্যমান্যদের আয়োজিত সালিশ বৈঠক চলাকালে মান্নানের নেতৃত্বে আবারও হামলা হয়। এ সময় কালু নামের আরও একজন কিরিচের কোপে গুরুতর আহত হন। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নানকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। অন্য অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। আব্দুল মান্নানকে গণধোলাইয়ের পর আটক করা হয়েছে এবং মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।”

আহত সাকিবের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন: সুমন, মান্নান, জাকির, শাহ আলম, মামুন, জয় ও দেলোয়ার।

ঘটনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে একাধিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। যুবদলের হাটহাজারী উপজেলা শাখা থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘটনার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মির্জাপুর ইউনিয়নের যুবদলের ৫নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাকিরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং তাকে ৩ দিনের মধ্যে স্বশরীরে দলের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

এদিকে হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফখরুল হাসান এবং সদস্য সচিব নুরুল কবির তালুকদার জানান, “যে কেউ দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধে জড়ালে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, “একটি স্বার্থান্বেষী চক্র পরিকল্পিতভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এসব কাজ করছে। আমরা দলীয়ভাবে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, “এটি সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে একটি বিরোধ থেকে সৃষ্ট ঘটনা। তবে আইনগতভাবে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। অপরাধী যেই হোক, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।”

মন্তব্য করুন