
প্রকাশিত: ৩ ঘন্টা আগে, ০৪:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সিনিয়র প্রতিবেদকঃ
বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত করা হয়েছে।
এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘ভয়ভীতি ও দমনপীড়নের মাধ্যমে’ ভোটহীন নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন খান গত ২২ জুন এই মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার বুধবার (২৫ জুন) ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমানের আদালতে দণ্ডবিধির ১২০ (ক), ৪২০ ও ৪০৬ ধারা যুক্ত করার আবেদন করেন, যা আদালত মঞ্জুর করেন।
মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে ইসি বরং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধীদলকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিয়েছে।
তিনটি নির্বাচনকেই বিএনপি অস্বচ্ছ, প্রশ্নবিদ্ধ এবং ভোটারবিহীন বলেছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, এ কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং তাদের সময়ের নির্বাচন কমিশনাররা।
মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি ওই সময় সরকারপ্রধান ছিলেন। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভয়ভীতি ও দমনপীড়নের মাধ্যমে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে এবং তাদের নির্বাচন থেকে দূরে রেখে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেন।
এই নির্বাচনগুলোতে সরকারবিরোধী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং আগেই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘ভোটের আগের রাতে ভোট’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যেটি 'নীশিরাতের নির্বাচন' নামে পরিচিত।
২০২৪ সালের নির্বাচনে বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ শরিক ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যেটি ‘আমি আর ডামি’ নামে আলোচিত হয়।
এই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
এরপর হাইকোর্টের এক বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয়, যার ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি হয়। সেই রায়ে বলা হয়, তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা ভেঙে দিয়েছে এবং সংবিধানের নিরপেক্ষতা নষ্ট করেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের পর সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়, ওই তিন নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই নির্দেশ দেন।
এদিকে, মামলার অন্যতম আসামি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
মন্তব্য করুন