
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ, ২০২৪, ১২:০৮ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০০ বছরের প্রাচীন মন্দির শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরে ৬ দিনব্যাপী পূজা হোমযজ্ঞ ও মহোৎসব শুরু হয়েছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মেড্ডায় শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈদিক পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ৬ দিনব্যাপী হোমযজ্ঞ ও মহোৎসবের উদ্বোধন করেন মন্দির কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য।
এ সময় বাংলাদেশর বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকে আগত পুরোহিত পন্ডিতগন সহ স্থানীয় ভক্তবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুরে জীব জগতের কল্যান কামনায় সপ্তশতী চন্ডী মহাযজ্ঞ শুরু হয়। এতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তবৃন্দরা যজ্ঞের আহুতি হিসেবে ফল, ফুল, দূর্বা, বেলপাতাসহ বিভিন্ন পূজার সামগ্রী যজ্ঞ স্থলে প্রদান করেন। এসময় আয়োজকসহ ভক্তরা জীব জগতের কল্যাণ কামনা করেন।
যজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজকসহ পুরোহিতেরা জানান, আজ থেকে ৩০০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা দূর্গাচরন আচার্য্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে শহরের মেড্ডা এলাকার তিতাস নদীর তীরে শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপর থেকে জীব জগতের কল্যাণ কামনায় প্রতি বছর এই যজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। পরে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ডিনামাইটের মাধ্যমে ২৪ ফুট উচু কালভৈরব মূর্তির ক্ষতিসাধন করা হয়। এর পর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েক বছর পূজা-উৎসব বন্ধ থাকে।
পরে বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক ভারত শিরোমনি খ্যাত ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজ স্থানীয় ভক্তদের সহযোগিতায় কাল ভৈরব মন্দিরটির পুণপ্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে গত ৪৬ বছর ধরে পুনপ্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত শ্রী মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন, কাল ভৈরব মন্দির প্রাঙ্গণে এবার ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।
৬ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আজকে প্রথম দিন যজ্ঞের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এবার বিশেষ আকর্ষনে চন্ডী মায়ের অপর রূপ বগলামুখী মায়েরও পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জীব ও জগতের শান্তি কামনায় শ্রী সপ্তশতী চন্ডী মায়ের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে।
এদিকে কালভৈরব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্রী নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, চন্ডি শব্দ এসেছে চন্ড শব্দ থেকে। চন্ড মানে উগ্র। এই চন্ডকে স্ত্রী লিঙ্গ করে চন্ডী করা হয়েছে। উগ্রচন্ড সব সময় রাগান্বিত থাকেন। তাকে তুষ্ট করার জন্যেই মূলত প্রার্থনার আয়োজন। তিনি বলেন, শ্রী শ্রী চন্ডীর ১৩ টি অধ্যায় রয়েছে। সেখানে ৭'শ স্লোক আছে। ৭'শ স্লোকবলে একে সপ্তসতি রূপে আখ্যায়িত করাহয়। পঞ্চমুন্ড চন্ডী আছে তার সমস্ত অংশ বিশ্লেষন করলে সপ্তসতী রূপেই প্রকাশ পায়।
মন্দিরে আসা ভক্ত চন্দন রায় জানান, আমি প্রতি বছর এই উৎসবে এসে সমবেত হই এবারো এসেছি পরিবার নিয়ে। শ্রী শ্রী কালভৈরব ও ভৈরবী মায়ের কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সকলবে ভাল রাখেন সুস্থ রাখেন। সকল প্রকার মহামারি থেকে যেন সবাই মুক্ত থাকে।
মেলাতে মাটির পরশা নিয়ে বসা পরশা দাস জানান, প্রতি বছরই তিনি এই মেলাতে মাটির খেলনা বিক্রি করে থাকেন। মেলার আজ প্রথম দিন হওয়াতে বেচা-কেনা মোটামোটি। তবে সামনে বিক্রি আরো ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কালভৈরব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য্য জানান, জীব ও জগতের শান্তি কামনায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও যজ্ঞানুষ্ঠান হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা যেন ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে পারি যেজন্য সকলের মঙ্গল কামনা করা হবে। যজ্ঞকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশ-বিদেশের ভক্তরা সমবেত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, ৬ দিনব্যাপি যজ্ঞ উৎসব সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্হা জোড়দার করা হয়েছে।
এ দিকে ৬ দিনব্যাপী যজ্ঞ উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দির আশেপাশে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় নাগরদোলাসহ খেলনা সামগ্রী, মাটির সামগ্রীসহ হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।
মন্তব্য করুন