
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ, ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সুবর্ণচর প্রকল্প বর্তমানে একটি বৃহৎ পর্যায়ের সমন্বিত খামারে রূপান্তরিত হয়েছে। শুরুতে তেল জাতীয় ফসলের বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১৪ ইং সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে সহস্রাধিক পণ্য নিয়ে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। আর এরই মাঝে সবকিছু ছাড়িয়ে সুবর্ণচরের বিএডিসি একটি কৃষি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিনত হয়েছে। অন্যদিকে কৃষির সবগুলো উপাদানের কেন্দ্রভূমি এই বিএডিসি যেন এখন উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকের আঁতুড়ঘর।
সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের চর মজিদ গ্রামে বিএডিসির কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে ১০০ একর জমি নিয়ে কাজ শুরু করলেও প্রকল্পটির নানাবিধ কার্যক্রমের নতুনমাত্রা যুক্ত হওয়ার ফলে পর্যায়ক্রমে বাড়তে বাড়তে এটি বর্তমানে ১৬৭ একরে দাড়িয়েছে। বিশাল আয়তনের এই বিএডিসি'র বহুমাত্রিক কার্যক্রমে যেমন উপকৃত হচ্ছে কৃষকেরা তেমনি এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে দর্শনার্থীরাও। বিএডিসির অভ্যন্তরে হাজারো প্রজাতির শস্য ভান্ডারের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির পাখ-পাখালির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন পর্যটকেরা।
বিএডিসি সুবর্ণচর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও খামার বাড়ির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক মোঃ আজিম উদ্দিন এখানে যোগাদানের পর তিনি ফুল, ফল আর ফসল আবাদের মাধ্যমে বৃহদায়তনের এই খামারটিকে একটি দৃষ্টিনন্দন অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশে গঠনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে স্মার্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কৃষির যুগোপযোগী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার নতুনত্ব আর উদ্ভাবনী চিন্তার অভিপ্রায়ে প্রকল্পটির আওতায় তেল ও ডাল বীজ, দেশীয় জাতের মাছ, শাক-সবজি, গাছ-গাছালী, আউশ-আমন-বোরো ধানের চাষ, গম, বাহারি ফুল, দেশীয় ফলের আবাদ সহ পাখ-পাখালী, গরু- মহিষ, ভেড়া, হাঁস-মুরগির খামার সবই সুপরিকল্পিতভাবে সাজিয়েছেন এই চৌকস প্রকল্প পরিচালক। এখানের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি কৃষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য যেন একটি আদর্শ কৃষি শিক্ষা কেন্দ্র।
ভালো বীজে ভালো ফসল নীতিতে বিশ্বাসী বিএডিসি। তাই বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করার জন্য এখানে রয়েছে বীজ শোধনাগার ও বীজ সংরক্ষণের জন্য গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা। বিএডিসির প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকদের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে বলে মনে করেন উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা। বিএডিসি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও চুক্তিবদ্ধ চাষী খন্দকার দিদারুল আলম জানান, "বিএডিসির পরামর্শ এবং সহায়তায় আমাদের ধানের ফলন ও মৌসুমি ফসল অনেক ভালো হচ্ছে। ভালো ফলনের কারণে আমাদের আগের তুলনায় আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।" বিএডিসি'র পুরো প্রকল্প এলাকা জুড়ে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় অনেক জনবলের। তাই এখানে দৈনিক গড়ে ১৫০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করার কারণে স্থানীয় বেশ কিছু দরিদ্র পরিবারের কর্মসংস্থানের ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএডিসি'র প্রকল্প পরিচালক জানান, "নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এই বিএডিসির প্রচেষ্টায় সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বহু অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এসেছে। লবণাক্ততা দূরীকরণ সহ নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মাঝেও প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে কৃষকবন্ধব সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি। তাই চলতি বছরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতিহার বাস্তবায়নে প্রকল্পের ধারাবাহিক চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের বাইরেও আরো বিশেষ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।" এছাড়াও সময়ের ব্যবধানে আগামীদিনে বিএডিসির কর্ম পরিধি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সুবাদে দেশের মূল ধারার উন্নয়নের সাথে আরো নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় অঞ্চলের বেশ কিছু কৃষকেরা জানান- বিএডিসি'র মাধ্যমে প্রদত্ত বহুমুখী কৃষি সেবা প্রাপ্তির সুবাদে বিএডিসির সাথে তাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
বিএডিসির কার্যক্রম সর্বাধুনিক হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে কৃষকের উন্নয়ন ছাড়াও দেশের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে অনন্য ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও বিএডিসি সুবর্ণচর প্রকল্প প্রান্তিক কৃষকের লালিত স্বপ্ন পূরণেও একধাপ এগিয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন