গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ, ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

গাজীপুরে অনার্স পরীক্ষার খাতা চুরির ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ষ্টোর রুমের তালা ভেঙ্গে ২০২২ সালের অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষার নিরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা ১০ বস্তা উত্তরপত্র চুরি ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের একজন (অনিক) ঘটনার দিন শুক্রবারই উত্তরপত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। সে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের অনিয়মিত শিক্ষার্থী এবং তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। অপরজন একই কলেজের স্নাতক পাস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র (আরিফুল ইসলাম রবিন), তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বরাকৌটা এলাকায়। রবিন স্থানীয় চান্দনা এলাকা থেকে রোববার গ্রেপ্তার হয়েছে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানায় অজ্ঞাত চোরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন কলেজটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান পরীক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ইফফাত আরা। পরে গ্রেপ্তারদের ওই মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক জানান, শনিবার মহানগর হাকিম আদালতে তাদের একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিকালে সে বিচারককে জানিয়েছে খাতাগুলো কেজি দরে বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যেই চুরি করা হয়েছিল। এ কাজে তারা মোট চারজন জড়িত ছিল। যারা কলেজের পাশেই মেসে ভাড়ায় থাকতো। চুরির আগে তারা ওই কক্ষে খাতা রাখতে দেখেছে তারা। এরপরই ওই খাতা চুরির পরিকল্পনা করে তারা। গ্রেপ্তাররা সকলেই বখাটে প্রকৃতির তারা নেশাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের কাজেও জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পাশের ষ্টোর রুমে মধ্যে রাখা আমার অধীনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১বর্ষ পরীক্ষা-২০২২ রাষ্ট্র বিষয়ের পরীক্ষার ৩৯বস্তা উত্তরপত্র ষ্টোর রুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। গত ২১মার্চ বিকেলে ষ্টোর রুমে তালা সঠিকভাবে লাগানো দেখে আমি বাসায় চলে যাই। ২২মার্চ শুক্রবার দুপুরে ২টার দিকে কলেজের নিরাপত্তা প্রহরী শ্রী সুশীল ও নিরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষকে জানান, ষ্টোর রুমের তালা ভেঙ্গে কে বা কাহারা উত্তরপত্র চুরি করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ১০ বস্তা পরীক্ষার উত্তরপত্র চুরি ঘটনা নিশ্চিত হন।

মামলার বাদী কলেজটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিষয়ের পরীক্ষার প্রধান পরীক্ষক ইফফাত আরা বলেন, শুক্রবার জু'মার নামাজের পর খবর পাই ষ্টোর রুমের তালা ভেঙ্গে কে বা কাহারা আমাদের খাতাগুলো নিয়ে গেছে। পরে প্রিন্সিপাল স্যার আমরা সবাই সেখানে যাই পাশাপাশি পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে আমরা দেখি ১০টা বস্তা খাতা চুরি গেছে। কোন বস্তাতে ২৫০টি উত্তরপত্র, কোন বস্তাতে ২৮০টি আবার কোন বস্তাতে ৩০০ থেকে ৩৫০টি উত্তরপত্র ছিল। পরে অবশ্য কেউ একজন একটি অটোরিকশা করে ১০ বস্তা খাতা পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে কে পাঠিয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. বিএম আব্দুল হান্নান জানান, সহযোগী অধ্যাপক ইফফাত আরা ওই পরীক্ষার একজন প্রধান পরীক্ষক। তার অধীনে থাকা বিভিন্ন পরীক্ষকরা উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর প্রধান পরীক্ষকের কাছে নিরীক্ষার জন্য পাঠান। এইসব উত্তরপত্রগুলো নিরীক্ষার আগে কলেজের ওই স্টোর রুমে তালা আটকে রাখেন। কিন্তু গত শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে বিজ্ঞান সেখানকার তালা ভেঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ বস্তা খাতা চুরি হয়ে যায়। পরে ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে কলেজেরই এক ছাত্র অটোরিকশা দিয়ে ১০ বস্তা খাতা নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আসে। পরে ওই ছাত্রকে পুলিশ আটক করেছে। তবে এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বিষয়টি দারোয়ানরা পুলিশকে অবহিত করেছে আপনারা থানায় খোঁজ নেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাসন থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, খাতা চুরির ঘটনায় অনিক নামে ওই কলেজের দ্বদশ শ্রেণীর অনিয়মিত এক ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। চুরির ঘটনায় তার সঙ্গে আরো কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করা হচ্ছে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে একদিনের রিমান্ড নেয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে বাসন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা চুরির ঘটনায় দুই আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১০ বস্তা খাতা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে একদিনের রিমান্ড রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

 

মন্তব্য করুন