
প্রকাশিত: ৮ মে, ২০২৪, ১২:৩৬ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
ইউরোপের ভিসামুক্ত চলাচলের অঞ্চল শেঙেনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি পেয়েছে রোমানিয়া৷ আর এরপর থেকেই ইউরোপ অভিবাসন প্রার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটি। বৈধ ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসে পরবর্তীতে নানা কারণে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অভিবাসীরা। আর এভাবে অনিয়মিতভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৩ সালে রোমানিয়ায় আটক হয়েছেন তিন হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি৷ তথ্য ইনফোমাইগ্রেন্টস।
গণমাধ্যমের বরাতে রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের আরাদ কাউন্টির মুখপাত্র দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রুর বলেন, ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ৪০০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে রোমানিয়া থেকে অনিয়মিত উপায়ে সীমান্ত অতিক্রমের আটক করে বর্ডার পুলিশ৷ তাদের বেশিরভাগই হাঙ্গেরিতে ঢুকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও জানান তিনি৷ অভিবাসীরা সাধারণত পণ্যবাহী লরি, ট্রাক অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোমানিয়া ছাড়ার চেষ্টা করেন৷
বর্ডার পুলিশের মুখপাত্রের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছর অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা৷ ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে৷ যাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বৈধ ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছিলেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তারা৷
গেল বছর সীমান্তে আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের নাম৷ দেশটির ৮১০ জন নাগরিকের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা আটকে দিয়েছে রোমানিয়ার সীমান্ত পুলিশ৷ এছাড়া নেপালের ৩৫৯ জন, শ্রীলঙ্কার ৩৩০ জন এবং ভারতের ২২০ জন অভিবাসীকে গত বছর সীমান্ত থেকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের মুখপাত্র৷
২০২৩ সালে এই সীমান্ত পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি পারাপারের চেষ্টা দেখা গেছে৷ এ প্রসঙ্গে দিনসা আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রু বলেন, সীমান্তে বিপুল সংখ্যক তুর্কি-নিবন্ধিত মালবাহী গাড়ির চলাচল রয়েছে৷ এসব গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই মানবপাচারের অভিযোগ আসে৷ তাই সংকট নিরসে রোমানিয়া, হাঙ্গেরি এবং তুরস্ক কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করে আসছিল৷
আরও যোগ করে বলেন, তিন দেশের মধ্যে সফল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়া ও হাঙ্গেরি কর্তৃপক্ষকে সহায়তার জন্য তুর্কি সীমান্ত পুলিশের কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়৷ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তারা হাঙ্গেরিতে এবং ২০২২ সালের ২৫ মার্চ থেকে রোমানিয়াকে গাড়ি তল্লাশিসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা দিচ্ছে৷ রোমানিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার একটি চুক্তির আওতায় তুর্কি পুলিশ দেশটির ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানিয়়েছে বুখারেস্ট।
রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্ত ছাড়াও হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার মধ্যে অবস্থিত রোজকে হাইওয়েতেও এমন আন্তঃদেশীয় যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি থাকার কথা জানিয়েছে রোমানিয়া বর্ডার পুলিশ৷ রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশের মতে, বলকান রুটে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিন দেশের যৌথ সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্ববপূর্ণ।
বলকান রুটে সবার সহযোগিতায় অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই করাসম্ভব বলেও মনে করা হয়৷ এছাড়া এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার মধ্য দিয়ে তুর্কি পুলিশ কর্মকর্তাদের সীমান্তে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা হয়৷ এই অভিজ্ঞতা নিজ দেশে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় সহায়তা করবে৷
মন্তব্য করুন