মো: বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১১ মে, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে ১০ বছরে কোটিপতি মুরাদ

মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ছিলেন বেকার। ২০১২ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতি মাসে সরকারি ভাতা পেয়েছেন ২৭ হাজার টাকা করে। কিন্তু এই ১০ বছরে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। বলছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ভাটামাথা গ্রামের মুরাদ হোসেন ভূঁইয়ার কথা। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক কোটি ১০ লাখ টাকায় একটি ইটভাটা ক্রয় করেন। এরপর এটাকে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করতে আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ করা হয়।  

হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ সালে আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদে থাকা মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পরই তার সম্পদ জ্যামিতিক হারে বাড়তে শুরু করে। তার প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের হলফনামায় ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিজের নামে নগদ টাকা ছিল ৫০ হাজার। অস্থাবর-স্থাবর সম্পদের বাকি সব কলামই ‘প্রযোজ্য নহে’ লেখায় পূর্ণ ছিল। বাবা শাহ জাহান ভূঁইয়া থেকে তিন লাখ এবং ভগ্নিপতি আবু হানিফ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে ভোটের খরচ চালাবেন বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেন। ২০১৯ সালে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ টাকা। চাকরি/সম্মানী ভাতা থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয় তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা। বাকি সব আগের মতোই ‘প্রযোজ্য নহে’। এবার ২০২৪ সালে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি যে হলফনামা দিয়েছেন তাতে উন্নয়নের পরশে তার দিন বদলের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। একটি ইটভাটার মালিক এখন তিনি। পেশার বিবরণে ফাইভ স্টার ব্রিক্‌স নামে ওই ইটভাটার নাম উল্লেখ করা হয়। যৌথ মালিকানায় ৬০ শতক কৃষি জমি রয়েছে তার। রয়েছে নিজ বাড়িতে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের দুইতলা বিল্ডিং। এটি তার পিতা কর্তৃক হেবাকৃত বলে উল্লেখ করা হয়। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন পাঁচ লাখ ২ হাজার টাকা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা, নিজের নামে নগদ টাকা রয়েছে ৫ লাখ। বিয়ের উপহার হিসেবে দেখিয়েছেন ৩০ ভরি স্বর্ণ। যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, আখাউড়া উপজেলা পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন কিছু সময়। প্রথমবার তার সঙ্গে থাকা চেয়ারম্যান বিএনপি’র ইঞ্জিনিয়ার মুসলেম উদ্দিন ভূঁইয়া কোনঠাসা অবস্থায় ছিলেন। পরের বারের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের আবুল কাসেম ভূঁইয়ার সঙ্গে স্থানীয় হর্তাকর্তা মেয়রের দূরত্বের কারণে ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদেরই ছিল দাপট। উপজেলা পরিষদ অনেকটা মুরাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। এবার ২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে ভোটে লড়বেন। তাকে পাশ করাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশ। 

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সর্বশেষ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারন মানুষ থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন মুরাদ হোসেন। তিনি ইটভাটাসহ অন্যান্য ব্যবসায় বেশ মনযোগি ছিলেন। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা-সমাবেশে তিনি তেমন উপস্থিত থাকতেন না। আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।

আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ বুরহান উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোয় এখন চেয়ারম্যান পদে মুরাদ ও মনির হোসেন এর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

মন্তব্য করুন