দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ মে, ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে চলছে বালু কাটার মহোৎসব

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে চলছে বালু কাটার মহোৎসব। চরাঞ্চলের ত্রাস একাধিক মামলার আসামি সাইদ বাহিনীর প্রধান সাইদ মন্ডলের নেতৃত্বে বৈরাগীরচর বাজারের নীচে মন্ডলপাড়া ঘাটে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ঘেষে পদ্মা নদীতে অবাঁধে চলছে এ বালু কাটার
মহোৎসব। এরফলে রাইটা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে বলে নদী ভাঙ্গনের শিকার সর্বস্ব হারানো পদ্মাপাড়ের ভূক্তভোগীরা অভিযোগে জানিয়েছে। শুধু পদ্মা নদীতে নয় পদ্মায় জেগে উঠা চরে ব্যক্তি মালিকানা জমির মালিকদের বিভিন্ন ধরনের
হুমকি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে সাইদ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা জোর পুর্বক বালু উত্তোলন করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছে।

সরকারী নির্দেশানা বা নিষেধাজ্ঞা না মেনে প্রশাসনকে ম্যানেজ  করে অবাঁধে অবৈধভাবে বালু কেটে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইদ বাহিনীর লোকজন। পদ্মার চরের জমির মালিকরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের প্রাণনাশ সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে বাহিনী প্রধান সাইদ মন্ডল। একইভাবে ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুরে শতকোটির টাকার বেশী ব্যয়ে নির্মিত স্থায়ী বাঁধ ঘেষে পদ্মা নদীতে অবাঁধে বালু কাটা চলছে। আর এ বালু কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছে পিএম কলেজের কর্মচারী ইসতিয়াক আহমেদ সনি। স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার নিকটজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা বলে পদ্মাপাড়ে বসবাসরত ইসলামপুর গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর জুব্বার পাড়ার মৃত ভাদু মন্ডলের ছেলে সাইদ মন্ডল ও তার দুই ভাই রিপন মন্ডল এবং মিঠু মন্ডলের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক সন্ত্রাসী বাহিনী। আর এ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা পদ্মা নদীতে রাতের আধাঁরে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শত শত ট্রলি বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

একইভাবে বৈরাগীরচর মোল্লাপাড়া ঘাটে বৈরাগীরচর এলাকার টগর মোল্লা, হেদায়েত মোল্লা, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল লতিব পদ্মা নদী থেকে অবাঁধে বালু উত্তোলন করে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এরফলে নতুন করে পদ্মার ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারাতে পারে এমন শঙ্কায় পড়েছে পদ্মাপাড়বাসী।


উপজেলার মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, তারাগুনিয়া, আল্লাদর্গা থেকে আসা স্যালো ইঞ্জিন চালিত শত শত ট্রলি বা স্টিয়ারিং প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত পদ্মায় অবাঁধে বালু কাটার মহোৎসব চালাচ্ছে। অবৈধ বালুর ট্রলি প্রতি ৪০০ টাকা দিতে হয় বাহিনী প্রধান সাইদ মন্ডলকে। আর বালির ঘাটে থাকা সাইদের ক্যাডারা ট্রলি প্রতি টাকা আদায় করে থাকে। বৈরাগিরচর বাজারের নীচে পদ্মার চরে রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান সাইদ মন্ডলের বাথান বাড়ি। সেখান থেকে চরাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে অবাঁধে বালু কাটার তান্ডলীলা চালাচ্ছে। এতে তার প্রতি রাতে আয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।

সাইদ বাহিনী ভয়ে ভীত সন্ত্রস্থ চরের লোকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ‘আমরা দুর্বল সহজ সরল মানুষ। আমাদের পদ্মায় জেগে উঠা জমি থেকেও প্রতি রাতে শত শত গাড়ি বালু ও মাঠি কেটে নিয়ে যাচ্ছে সাইদ বাহিনীর লোকজন। আমরা কিছু বলতে গেলে সাইদ বাহিনী আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। রাতের আধারে মাঠের ফসল কেটে নেয়, আমারা ভয়ে কিছু বলতে পারিনা’।

উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান সাইদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর, বাঘা, লালপুর থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও চরের বাথানের অড়ালে রয়েছে তার রমরমা মাদক ব্যাবসা। চরে নিরাপদে ও নির্বিগ্নে তার বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাদক জেলা ও জেলার বাইরে সরবরাহ করে থাকে। ভারত থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের মাদক তার নিজস্ব মাইক্রোবাসসহ ভাড়াকরা মাইক্রোবাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিচ্ছে তার বাহিনীর সদস্যরা।

সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান সাইদকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা না হলে চরাঞ্চলের দূর্ধর্ষ ত্রাস ও সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান ক্রসফায়ারে নিহত লালচাদের মত আরো এক সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান হবে। এরফলে চরাঞ্চল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে এমনটি জানিয়েছেন নিরীহ চরবাসী।

পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু কাটার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বালু ও মাটি কাটা বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই বালু উত্তলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন