
প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০২৪, ১১:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে নেমেই বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরেন এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন ক্যাডেট লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের রাখালিয়া গ্রামের মো. আইয়ুব। মঙ্গলবার তার বড় ভাই ওমর ফারুক তাকে রিসিভ করেন চট্টগ্রাম থেকে।
রাতেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি আসেন। ১৫ মে সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই সাংবাদিকরা তার বাড়িতে জড়ো হতে থাকেন।
বুধবার দুপুরে উপজেলার সোনাপুর ইউপির রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারির বাড়িতে গিয়ে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করতে দেখা যায়। সকাল থেকে জেলা ও উপজেলার গণমাধ্যম কর্মীরাও ভিড় করেন।
আইয়ুব খান সাংবাদিকদের বলেন, সোমালিয়া দস্যুদের কাছে ৩৩ দিন জিম্মি ছিলাম। রাতে ঘুম হয়নি, উদ্বেগ ও আতঙ্কে কেটেছে কয়েক দিন। প্রথমে মাছ ধরার ট্রলারে করে দস্যুরা আসার সময় আমরা তা দেখেছি। তখন আমি ডিউটিতে ছিলাম। সতর্ক এলার্ম বাজানো হয়, সবাই সর্তক ছিল; কিন্তু দস্যুদের সঙ্গে মোকাবেলা করার সাহস কারো ছিল না। প্রথমে দস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে প্রবেশ করে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি রুমে নিয়ে যায়। ৩-৪ দিন দস্যুরাসহ সবাই একই রুমে অবস্থান করেছি কিন্তু থাকা ও খাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। আমরা রোজা রাখতাম; তখন রমজান মাস ছিল। তাদের বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ইফতার ও সেহেরি খেতে হবে, একটু নমনীয় যেন হয়। আমরা সবাই যাতে নামাজ ও রোজা রাখতে পারি।
তিনি বলেন, দস্যুরা আমাদের খাবারই খেত কিন্তু কয়েক দিন পর তারা খাবারে তৃপ্তি না পাওয়ায় দুম্বা নিয়ে আসা শুরু করে। পরে আমাদের খাওয়া বাদ দিয়ে তারা খাওয়া শুরু করে। ৫-৬ দিন পর দস্যুরা সবাই যার যার দায়িত্ব পালন ও অন্য রুমে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং দ্রুত তারাই আমাদের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ ও খোলামেলা কথা বলা শুরু করে। আমাদের জানায়- তোমাদের কোনো ক্ষতি করব না; আমরা মুক্তিপণ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছি। তোমাদের মালিকপক্ষ সাড়া দিয়েছে; তোমরা ইচ্ছা করলে মোবাইলে দেশে কিংবা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পার। আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মালিকপক্ষ প্রতিদিন যোগাযোগ করত তাদের সঙ্গে কথা বলত। ঈদের দিন তারা আমাদের নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়।
আইয়ুব খান বলেন, আমরা ৩৩ নাবিক নামাজ পড়ার সময় তারা চারদিকে অস্ত্র দিয়ে পাহারা রাখে। ৩-৪ দিন পরপর তাদের সদস্যরা পরিবর্তন হতো। তবে প্রত্যেকের কাছে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে আসত। মুক্তিপণ পাওয়ার পর তারা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় আমাদের অনেক দুম্বা দিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে আইয়ুব জানান, গত ১ বছর ধরে ইন্টার্ন করছেন। পড়াশোনা শেষ করে অন্য জাহাজে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।
আইয়ুবের ভাই ওমর ফারুক জানান, কবির গ্রুপ থেকে সোমবার রাতে আমাকে ফোন করে জানায়-মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরে আইয়ুব আসবে। তাকে রিসিভ করার জন্য আমি গিয়েছি। ভাইকে দেখে ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দ লাগতেছে। কারণ ঈদে আনন্দ করতে পারিনি আতঙ্কে ও উদ্বেগের মধ্যে অতিবাহিত করেছি।
আইয়ুবের ৫ বছর বয়সের ভাগ্নে সাব্বির আহমদ ও ৭ বছরের ভাগ্নি সুরাইয়া সুলতানা জানায়, মামাকে কাছে পেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে।
ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারি বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। তিনি রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি। প্রায় ১ বছর ধরে ইন্টার্ন করছেন আইয়ুব।
আইয়ুবের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আইয়ুব খুব ভালো ছেলে। আমরা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে সরকার ও মালিকপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে।
১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক ছিলেন। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে ৩৩ দিন পর দস্যুরা তাদের ছেড়ে দেয়। মঙ্গলবার বিকালে জাহাজসহ নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন।
মন্তব্য করুন