
প্রকাশিত: ২২ মে, ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনাকে কলকাতার বিধাননগরের নিউটাউনে সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে এমপিকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি আজ বুধবার নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তবে ওই ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ। একটি সূত্র বলছে, ফ্ল্যাটে মরদেহ টুকরো টুকরো করে ৪টি ট্রলি ব্যাগে করে গায়েব করা হয়েছে। পুলিশ বর্তমানে সেই ব্যাগগুলোর সন্ধান করছে।
এমপি আনারকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। রহস্য দেখা দিয়েছে তার মৃত্যু ঘিরে। উঠছে নানা প্রশ্নও। তবে সব প্রশ্নের ভিড়ে একটি বিষয় সবাই জানতে চায়। কে এই এমপি আনার, তাকে ঘিরে এতো আলোচনা কেন?
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, এমপি আনারের বিরুদ্ধে হুন্ডি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে সড়কপথে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের রুটও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভারতে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সিন্ডিকেটের একটি বড় ‘চেইন’ ঝিনাইদহে নিয়ন্ত্রিত হয়।
ভারতের হুন্ডি সিন্ডিকেট যোগাযোগ করে ঝিনাইদহে। আর ঝিনাইদহ থেকে ভারতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা (ভারতীয় রুপি) পৌঁছে দেওয়ার মেসেজ পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে দুই দেশের হুন্ডি সিন্ডিকেটের মধ্যে টাকা/রুপি অবৈধ লেনদেনের সময় একটি মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এমপি আজিমের বিরুদ্ধে। ওই সিন্ডিকেটই কৌশলে তাকে কলকাতা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা করছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আমি বিষয়টি দুদিন আগেই জানতে পারি। ভারতীয় একজন ভদ্রলোক এমপিরও পরিচিত, তিনি আমাকে টেলিফোন করে তাকে না পাওয়ার বিষয়টি জানান। জানার পর ভারতীয় বিশেষ টাস্কফোর্স—এসটিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভারতীয় থানা পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আনোয়ারুল আজিমের একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় নম্বর ছিল। ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে তার নম্বর থেকে দুটি কল আসে। একটি আসে তার এপিএসের নম্বরে, আরেকটি ফোনকল আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নম্বরে। কিন্তু তখন দুজনের কেউই কল ধরতে পারেননি।
ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় জানতে পেরেছি, আনোয়ারুল আজিমের ভারতীয় নম্বরের লোকেশন মুজাফ্ফরাবাদ, অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ। সবকিছু মিলিয়ে আমরাও খোঁজখবর রাখছি। আনোয়ারুল আজিম তার ব্যবহৃত নম্বরটি মাঝেমধ্যে খুলছেন আবার বন্ধ করছেন। কারা তাকে হত্যা করেছে সবকিছুই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আনার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্ত পথে চোরাচালান করতেন তিনি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানাসহ মহেশপুর, কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে ‘টোকেন’ তৈরি করে তার বাহিনী। ওই টোকেন দেখালেই প্রশাসনের লোকজন মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি ছেড়ে দিত। এই টোকেন বাণিজ্য থেকে আনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
এই মাদক কারবারের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিকও বনে যান। ১৯৯১ সালে আনার ঝিনাইদহের আরেক চোরাকারবারি পরিতোষ ঠাকুরের সঙ্গে মিলে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। স্বর্ণের বড় বড় চালান রাজধানী থেকে বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশে পাচার করতেন তারা।
১৯৯৬ সালে আনার বিএনপি থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের কারবারের সঙ্গে কালীগঞ্জ পৌরসভার এক কমিশনারের হাত ধরে অস্ত্র চোরাকারবারে জড়ান তিনি। তার অবৈধ অস্ত্রের চালান চরমপন্থি ক্যাডার সামসেল ওরফে রবিনের কাছে বিক্রি হতো।
মন্তব্য করুন