পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ মে, ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

নিষিদ্ধ পলিথিন ফেলা হচ্ছে শিবসা-কপোতাক্ষ নদে

কপিলমুনি বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা ও নিষিদ্ধ পলিথিন । ছবি: সংগৃহীত

দেড় যুগ আগে পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর উপাদান পলিথিন খুলনার পাইকগাছা উপজেলা জুড়ে ব্যবহার ও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্য। আর সেই পলিথিন ব্যবহারের পরে ফেলা হচ্ছে উপজেলার প্রধান দুটি নদে। যার ফলে শিবসা ও কপোতাক্ষ নদের তীরে নিষিদ্ধ পলিথিনে স্তুপে পরিণত হয়েছে। পলিথিনের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদী পরিবেশ দূষণসহ ভরাট হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু হতে এই বেচা বিক্রি ও বাজারের দোকানদারদের ব্যবহারে মনে হচ্ছে পলিথিন পলিথিন নিষিদ্ধ নয়। আগের মত চলছে সর্বস্তরে চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের স্বাভাবিক ব্যবহার। থেমে নেই পলিথিনের ব্যবহার। নেই বাধা দেওয়ার কেউ। কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান, ফলের দোকান, কসমেটিকস এর দোকানসহ সর্বস্তরে পাইকগাছা উপজেলা, কপিলমুনিসহ সব বাজারেই চলছে খোলাখুলি পলিথিন ব্যবহার।

যদিও দেড় যুগ আগে পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর উপাদান হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় পলিথিন ব্যাগ। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়ণ করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এর উৎপাদন, কিন্তু পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর হিসেবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে আইন প্রয়োগসহ নানান কার্যক্রম বিদ্যমান থাকলেও মিলছে না কার্যকরি কোনো সমাধান।

ব্যাবসায়ী ও সুধী সমাজ বলেছেন, পলিথিন ব্যাবহার নিষিদ্ধ থাকলেও সেটা ভুলে গেছে উপজেলাবাসী। সেই সাথে পলিথিন ব্যাবহার ও বিক্রি বন্ধে কোন অভিযান আর চোখে পড়ে না।  উল্টো বেড়েছে আইনে নিষিদ্ধ এ পলিথিনের তৈরি ব্যাগের যথেষ্ট ব্যবহার। কাঁচাবাজার থেকে মুদি দোকান কিংবা হকার থেকে বিপণিবিতান সর্বত্রই মিলছে পলিথিন ব্যাগ। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং উপজেলাব্যাপি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনি ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে নিষিদ্ধ এ পলিথিন ব্যাগ।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৯০-৯৫ ভাগ মানুষ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে অবগত। কিন্তু পলিথিন ব্যাগের বিকল্পে সহজলভ্য কোনো কিছুই না থাকায় এটির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। এজন্য অবৈধ উৎপাদন বন্ধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থাপনা, পলিথিনের বিকল্প পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ সহজলভ্য ও সুলভ মূল্য না হওয়া এবং বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারে মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি না করাকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, পলিথিন ব্যাগের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে দেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। ক্যান্সার, কিডনি, চর্মরোগ এবং বন্ধ্যাত্বসহ নানা রোগের অন্যতম কারণ পলিথিনে থাকা কেমিক্যাল। এটির লাগাম এখনই টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে এমন নানান রোগের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হবে বলে শঙ্কা তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর উপাদান হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাই বাংলাদেশেও ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর প্রেক্ষিতে পলিথিনের তৈরি ব্যাগে ব্যবহার, উৎপাদন এবং বিপনন ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়- যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডও হতে পারে। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করাহলে ছয় মাসের জেল ও জরিমানা করা হবে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের নজির এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি।

এ পলিথিন ব্যবহার নিয়ে বানিজ্যিক উপশহর কপিলমুনির দোকানদারদের কাছ থেকে জানা যায়, পলিথিন আর কাগজের ঠোঙার দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক কেজি পলিথিন দেড়শ টাকা। কখনও ১০-২০ টাকা কম বেশি হয়। কিন্তু এই এক কেজিতে দুই আড়াইশ পলিথিন থাকে। কিন্তু একই টাকায় যদি ঠোঙা কিনি তবে তাতে বড়জোর ৭০-৮০টা ঠোঙা থাকে। তাই পলিথিনে লাভ বেশি আমাদের।

পাইকগাছা নাগরিক আন্দোলনের নেতা এডভোকেট প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রি উৎপাদন, আমদানী বা বাজারজাত করে তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডও হতে পারে।

পলিথিন দিয়ে নানা রকম দন্ড ও জরিমানা অভিযান থাকলেও কোনভাবেই যেন মানতে চাচ্ছে না ব্যবসায়ীগণ। তাতে ক্রমাগত ভাবেই নিষিদ্ধ পলিথিন আবারো বাজার সয়লাব হচ্ছে। যার ফলে পরিবেশ ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। ‌

 

মন্তব্য করুন