
প্রকাশিত: ৭ জুন, ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে নারীরা এখন ব্যবসায়িক জগতে নিজেদের প্রতিভা ও দক্ষতা প্রমাণ করছে। নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তৈরি পোশাক, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, হস্তশিল্প, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে । স্টলগুলোতে তারা নিজেদের তৈরী পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে দেশীয় পোশাক, তৈজসপত্র, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প, গৃস্থলী ও কুঠির পণ্যসহ আসবাপত্র।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইসিজিএস ও কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় ২৫ টি স্টল স্থান পেয়েছেন। স্টলগুলো হলেন, স্কাস, প্রত্যাশী, ডেনিস রিফিউজি কাউন্সিল, হিউম্যানপটরিয়াম এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম সার্ভিস, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র, ভি এস ও, সুশীলন, করডিএইড, ইএফএসএন বেনিফিসিয়ারিজ সপ, এনআরসি, ওয়ার্ল্ড ভিশন, মুক্তি, এনজিও ফোরাম, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, এফ এ ও, একশ্যন এইড, প্লান, ইপসা, পালস, হ্যালবেটাড, আইওসিএন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল বেলায় প্রচন্ড গরমের কারণে তেমন একটা দর্শনার্থী দেখা যায়নি। বিকেল গড়ালে বাড়তে ভীর বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর । প্রতিটি স্টলে দাম যাচাই করে পণ্য ক্রয় করছেন। ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বেশিরভাগ দশনার্থী বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য কিনতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, অনেক সুন্দর হাতের কাজ করা বেত ও বাঁশের তৈরি পণ্যগুলো নজর কেড়েছেন সকলের। দেশীয় সংস্কৃতির কদর বাড়াতে ও জাগিয়ে রাখতে এসব মেলা সবসময় হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এনজিও সংস্থা প্রত্যাশী'র ১০০টির মতো আইটেম তারা স্টলে রেখেছেন। তার মধ্যে শতরঞ্জি, গাছের বিভিন্ন বাটি, প্লেইট থেকে শুরু করে হরেকরকমের নান্দনিক পণ্য। মাকেটিং ট্রেনিং অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, 'সব পণ্য মেয়েদের হাতের তৈরি। দুপুরের আগে তিনি ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন'। ডেনিস রিফিউজি কাউন্সিল তাঁদের ৭টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে, ডোরমেট, পাপস, পাখা, বাশের তৈরি, বামি কম্পোস্ট, চিপস।
এনজিও সংস্থা করডিএইড তাঁদের ২০ টি পণ্য নিয়ে এসেছেন। অফিস এসিস্ট্যান্ট দাউদ মন্ডল বলেন, 'বাঁশের জিনিসপত্রের প্রতি দর্শনার্থীদের বেশি চাহিদা। তিনি তার স্টল থেকে ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন'।
অন্যদিকে সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা’র (স্কাস) তাদের স্টলে হাতের তৈরি কলম দানি, ফাইল হোল্ডার, ফুলদানি, হাতের, তৈরি টিস্যু বক্স, হাতের তৈরি ট্রে, বাবুই পাখির বাসা, হাতের তৈরি গহনা ও নারীদের রুচিশীল হাতের তৈরি থ্রি পিস
SKUSএবং JPTTC এর উপকারভোগীরা এই উপকরণগুলো তৈরি করেছে।
দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা মেলা নিয়ে ’সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা’র (স্কাস) চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা বলেন, 'প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার বর্জন ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন করতে বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। পরিবেশ বিপর্যয় এখন বিশ্বের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটিকে সুরক্ষিত রাখতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। মেলা শুরু হয় সকাল ১০ টায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় নারী উদ্যোক্তা মেলা।
আয়োজকরা জানান, 'উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ অর্থনীতিতে যেমন গতি আনছে, তেমনি দারিদ্রতা বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারী ক্ষমতায়নেরও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে'।
উক্ত মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ও আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা আইএসসিজি’র পরিবেশ ও জ্বালানী বিয়য়ক সমন্বয়নকারি জোলবু বোল্ড এরডেন জানান, 'বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার নারী উদ্যোক্তাদের তৈরী করা পরিবেশ বান্ধব পণ্য নিয়ে এই মেলা সাজানো হয়েছে। মেলায় দেশি-বিদেশি প্রচুর দশনার্থী এসেছেন এবং তারা তাঁদের পছন্দের জিনিসপত্র ক্রয় করছেন। এছাড়া মেলা উপলক্ষে যে পণ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বাইরে সব এক জায়গায় পাওয়া যায়না'।
মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সহ সমন্বয়ক ও কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তানবীর সরওয়ার রানা জানান, 'পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য নারীরা সাজিয়েছেন এবং ব্যাপক সাড়া পেয়েছি'।
মেলায় আসা সাংবাদিক নেতা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজিবুল ইসলাম বলেন, নারী উদ্যোক্তারা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে, জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং দারিদ্র্যদূরীকরণে সহায়তা করছে। ফলে নারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত।
মন্তব্য করুন