সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: ২০ জুন, ২০২৪, ০৬:০২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

পানিবন্দী সিলেট

এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত

ছবি: সংগৃহীত

বন্যার পানিতে ভাসছে সিলেট। নদীর পয়েন্টে পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে। কোথাও পানির নিচে ঘরবাড়ি। কোথাও পাকা সড়ক, রাস্তা বানের তোড়ে ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে ব্রিজ-কালভার্ট। পানির নিচে তলিয়ে আছে সিলেটের সব কয়টি আঞ্চলিক সড়ক। এ কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলা সদরগুলোর সাথে জেলা সদরের। ঈদের দিন থেকে সিলেট ডুবে আছে বন্যার পানিতে। বন্যার কারণে আগামী ৩০ জুন থেকে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষা সিলেটে স্থগিত করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া দপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিছুটা কমলেও এখনো সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয়টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়িঘরে টিকতে না পেরে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ। জেলা প্রশাসনের হিসাবে  সিলেট জেলায় প্রায় নয় লাখ ৫৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকালে ১৩ উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন। জেলার ৬৯৮ আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭৮৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন। এর মধ্যে ওসমানীনগরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ও গোয়াইনঘাটে ১লাখ ৪৫ হাজার ২০০ মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। জেলার ১৫৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩০টি ইউনিয়নের ১হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। আর সিটি করপোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ডে বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ৫৫ হাজার। বন্যা কবলিত অনেক এলাকায় উদ্ধার বা ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে না এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকের। তবে প্রাশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ৬০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। একই সাথে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।


সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০.২ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে আর সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২০ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কানাইঘাট সুরমা ও লোভা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনও সুরমা নদীর পানি ডাইকের ১৮টি ভাঙ্গন কবলিত স্থান দিয়ে প্রবল স্রোতে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় কোথাও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে এবং নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।

উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ গ্রামীন রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিহ্ন থাকায় নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছেন। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পানিবন্দি এলাকার লোকজনদের। টানা বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এবং বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় বিশেষ করে শ্রমজীবি মানুষরা কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।


বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনদের সরকারি ত্রাণ সামগ্রী সার্বক্ষণিকভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারি ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া ১১৬২ জন মানুষদের মাঝে ১ বেলা খাবার নিশ্চিত করার জন্য চাল, ডাল, আলু, তৈল, মসলা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন গত তিন দিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বন্যা পরিস্থিতি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তুলে ধরছেন।
অপরদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বৃহস্পতিবার কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৪৫ মিটারে অবস্থান করছিলো। যা বিপদসীমা থেকে ১মিটার (৩ফিট) বেশি।

এর কারনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নতুন নতুন এলাকায় আক্রমণ করছে। বন্যার আক্রমণের শিকার এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নই। এর মধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চল,নদীপার এলাকা ও হাকালুকি হাওর ঘেষা এলাকার অবস্থা বেশি অবনতি।

ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের মধ্য বাজার ও পুর্ববাজার ডুবে আছে দুদিন ধরে। হাসপাতাল রোড ও আশপাশের কয়েকটি সরকারি দপ্তর, ফার্মেসি, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, জনস্বাস্থ্য উপ প্রকৌশলী অফিস ইত্যাদিও তলিয়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ থানারোড থেকে পুর্ব বাজার হয়ে  ১নং ইউনিয়নের অনেকগুলো গ্রাম বন্যা আক্রান্ত।

একই ভাবে আক্রান্ত মাইজগাও,উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ও উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের অনেক এলাকা। কারো বাড়িঘরে কারো রাস্তায় পানি। মানুষ ছাড়াও বিপাকে পড়েছে গবাদি পশুরা।

অন্যদিকে উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের মল্লিকপুর হাজী করম উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক টপকে কুশিয়ারা নদীর পানি হুহু করে ঢুকছে মল্লিকপুর হাওরে। যে কারনে এই পানির কারনে মল্লিকপুর থেকে ইলাশপুর ভায়া সড়কটি তলিয়ে যাবার আশংকা বেড়েছে। এই সড়কটি তলিয়ে গেলে  সিলেটের সাথে বিস্তৃত অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমরা ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলেছিলাম এখন লোকজন অন্য আরেকটায় উঠায় মোট আশ্রয় কেন্দ্র হয়েছে ৩৯টি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যগন, বাজার বনিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ সম্মিলিত ভাবে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছে জিআর এর চাল পাঠানো হয়েছে। তারা প্রয়োজন দেখে বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করবেন।

এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত: বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ৩০ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ৯ জুলাই থেকে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল সেগুলো যথারীতি হবে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) শিক্ষা বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। 

মন্তব্য করুন