সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: ২১ জুন, ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২০ লাখ মানুষ, শিশু ৮ লাখ উদ্বিগ্ন ইউনিসেফ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গেলো ২৪ ঘণ্টায় ভারি বর্ষণ না হলেও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলাগুলো এখনও পানির নিচে। তবে সিলেট মহানগরী থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর কয়েকটি পয়েন্টের পানি কমার তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। যদিও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৫টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়া প্রবাহিত হচ্ছে । জেলা প্রশাসনের হিসাবে সিলেট জেলায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এদিকে ইউনিসেফ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আকস্মিক এ বন্যায় ইতোমধ্যে ২০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি শিশু। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

শুক্রবার (২১ জুন) বিকালে ১৩ উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে সিলেট জেলা প্রশাসন বলেছে, জেলার ৭১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ২৭৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় বন্যায় আক্রান্তদের মধ্যে ওসমানীনগরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ও গোয়াইনঘাটে ১লাখ ৪৫ হাজার ২০০ মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। জেলার ১৫৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩৬টি ইউনিয়নের ১হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। আর সিটি করপোরেশনের ২৯টি ওয়ার্ডে বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ৬০ হাজার। বন্যা কবলিত অনেক এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে না এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকে।রয়েছে পানি বাহিত রোগ ছড়ানোর শঙ্কা।

তবে প্রাশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ৬০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। একই সাথে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

আর সিলেট আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গেলো ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা) পর্যন্ত ২০মি.মি বৃষ্টি হয়েছে আর সকাল ৬টা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) বৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এমনটি জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।


তিনি শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির সময় শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ডুবে মারা যাওয়া, অপুষ্টি ও মারাত্মক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়া, বাস্তুচ্যুতির আতঙ্ক এবং জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে তারা।

তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হলো, শিশুদের নিরাপত্তা ও মঙ্গল নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ সরকার এবং মাঠপর্যায়ের অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় ও অংশীদারত্বে আমরা গত পাঁচ দিনে বন্যা কবলিত প্রায় এক লাখ মানুষের মধ্যে নিরাপদ পানি বিতরণ করেছি। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকাকালীন তিন হাজারের বেশি ১০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পানির পাত্র বিতরণ করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন গুদাম থেকে জরুরিভিত্তিতে অতিরিক্ত জরুরি সরঞ্জাম আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের এ প্রতিনিধি জানান,  সিলেট বিভাগে ৮১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ১৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কঠিন এ সময়ে সম্ভাব্য ক্ষতি নিরসনে এবং ট্রমা বা আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে শিশুদের সহযোগিতা করতে শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মীরা পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন। সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোর পানি বিপজ্জনক উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে এবং আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কার কথাও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন