
প্রকাশিত: ১১ জুলাই, ২০২৪, ০৩:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে আবারও হু হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে নদনদীর পানি। এতে ব্রহ্মপুত্রের তিনটি পয়েন্টে সহ ধরলা ও দুধকুমার মিলে মোট পাঁচটি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৯ উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৫৫টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষের। টানা ১১ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি খাদ্যসংকটে পড়েছেন চর ও নিম্নাঞ্চলের বানভাসি মানুষজন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সদর সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার ওপর প্রধান প্রধান নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদ-নদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ১১ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। অনেকের বাড়ি ঘরে পানি থাকায় লোকজন নৌকা ও গলা গাছের ভেলায় বসবাস করছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন অনেক পরিবার। সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেলেও বেসরকারিভাবে তেমন ত্রাণ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই ত্রাণ সহায়তা পেলেও রান্না করার সরঞ্জাম না থাকায় শুকনো খাবারের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন অনেকেই। অপরদিকে চারণভূমি তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর তীব্র খাদ্য সংকট। কাঁচা ঘাস ও খড় না থাকায় গবাদিপশু নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
চলমান বন্যায় ধান, পাটসহ জেলার প্রায় ৫৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্লাবিত হয়ে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর এলাকার কৃষক শাহাআলম বলেন, গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি এক হাত বেড়েছে। এমনিতেই ১১ দিন কাজকর্ম করতে না পারায় পরিবারকে খুব কষ্টে আছি। তারমধ্যে পানিবৃদ্ধির কারনে আমাদের দূর্ভোগ শেষ হচ্ছে না।
একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, ১১ দিন ধরে বাড়ি ঘরে পানি। অনেকের নলকূপ তলিয়ে আছে। চুলাও পানিতে৷ তারা রান্না করতে পারছি না। শুকনো খাবারও নাই। খুব কষ্টে নৌকায় ও ঘরের উঁচু মাচানে বসবাস করছি। পানি কমার আশায় থাকলে নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ মুর্শেদ বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ২০ হাজার খাবার স্যালাইন,২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ৫ হাজার ম্যাট্রো ট্যাবলেট বিতরণের জন্য দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, জেলার নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বন্যা পূর্বাভাসের তথ্যানুযায়ী ভারতের উজানে ভারি বৃষ্টিপাত ফলে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলার বন্যা কবলিতদের জন্য বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৫৪২ মেট্রিক টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ২৩ হাজার ১২০ প্যাকেট শুকনো খাবার ৯ উপজেলায় বিতরণ চলমান।
মন্তব্য করুন