আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

মুরগির খামার নিচে মাছ চাষ, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

উপরে মুরগির খামার নিচে চলছে মাছ চাষ। সেই মুরগির বিষ্ঠা পড়ছে পানিতে, যা সরাসরি খাবার হিসেবে খাচ্ছে মাছ। এছাড়াও বিষ্ঠায় দূষিত হচ্ছে পানি, ছড়াচ্ছে উটকো দুর্গন্ধ। অ্যামোনিয়া গ্যাসের মতো বিষাক্ত উপাদানও মিশছে মাছে। এসব মাছ খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ চলছে। নিষেধ জেনে না জেনে এভাবেই মাছ চাষ করছেন স্থানীয়রা।নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিপজ্জনক এই পদ্ধতিতে মাছের চাষ হচ্ছে আগৈলঝাড়া গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে । 

কৃষি জমি খনন করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক মৎস্য খামার। প্রতিটি মৎস্য খামারের উপর রয়েছে মুরগির শেড। এখান থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকারও বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে এখানে, যা বিষ্ঠা হয়ে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে।

এ ব্যাপারে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের কর্মী সৈয়দ মাজারুল ইসলাম রুবেল বলেন, মুরগির বিষ্ঠার অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিও, ড্রাগ রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজি ইনফেকট্যান্ট থাকে। মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহারের ফলে সেগুলো পরে মানবদেহে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।  সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রান্তিক কৃষকেরা সেই বিধি নিষেধ মানছেন না। তাই অনতিবিলম্বে মাছ চাষে  মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার বন্ধ করতে  প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পথচারী জানান, এখন আর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করার কোনো উপায় নেই। মুরগির বিষ্ঠার গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমরা চাই রাস্তা থেকে এগুলো সরিয়ে ফেলা হোক।

মিজান নামের স্থানীয় একজন বলেন, ১০-১২ বছর আগেও আমাদের এই বন্দে ধান চাষ করা হতো কিন্তু এখন আর ধান চাষ করার মতো জমি নেই সব ফিশারি হয়ে গেছে। এই সকল ফিশারিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে উপরে মুরগির খামার। মুরগির লেদা খেয়েই এই মাছ বড় হচ্ছে। এই এলাকা দিয়ে এখন আর চলাচল করা যায় না মুরগির লেদা পানিতে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

রাংতা গ্রামের চাষি রকিব মোল্লা জানান, শুনেছি এভাবে চাষের মাছ খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এলাকায় তো এভাবেই মাছ চাষ হয়ে আসছে। এই মাছ স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষই তো এই মাছ খাচ্ছে।

জমির মালিক রাব্বি হোসেন বলেন, ধান চাষ করলে খরচ দিয়ে আমাদের পোষায় না। আমরা জমি ভাড়ায় দিয়ে দিয়েছি। নিজেদের কোনো কাজ করতে হয় না। বছরে এই জমি বাবদ আমরা ভালো টাকা পেয়ে থাকি।

ফিশারির উপরে মাছ চাষ করা সৈকত এগ্র জানান, এভাবে মাছচাষ যে ক্ষতিকর এই বিষয়টিই আমাদেরকে স্বাস্থ্য ঝুকির বিষয়ে দীর্ঘদিন আগে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেছেন ।

মুরগির শেড ছাড়া ফিশারিতে মাছচাষ করলে মাছের খাবার অনেক বেশি লাগে। এতে করে আমাদের পোষায় না। এভাবে চাষ করলে মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে মাছ বড় হয়, অন্য খাবার কম লাগে। তাই এই এলাকার সবাই এভাবেই মাছচাষ করছে। একইসঙ্গে দুটি চাষ হওয়ায় খরচ কম হয় লাভও বেশি থাকে। এ কারণে নতুন নতুন আরও খামারি এই পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন বলেও জানান তিনি।

আগৈলঝাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ পারভেজ খান বলেন, এখন এই পদ্ধতির উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব মাছ খেয়ে দুরারোগ্য রোগ ক্যান্সার, চর্মরোগ সহ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই চাষ থেকে খামারিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন মৎস্য কর্মকর্তা। 

আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সাইদুর রহমান বলেন, মৎস্য খামারের উপর যারা মুরগির শেড তৈরি করছেন এটা পরিবেশের উপর অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। এই পদ্ধতি থেকে ফিরে আসার জন্য আমরা খামারিদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন