
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই, ২০২৪, ০৭:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
১৫ দিন যাবৎ পানিবন্দি ১২ টি পরিবার। চিড়া মুড়ি খেয়ে জীবন কাটছে তাদের। চারটা ভাত রান্না করে খাওয়ার মত চুলাও চলে গেছে পানির নিচে। আমাদের পানি থেকে মুক্ত করে দেন। সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমরা এই দেশের নাগরিক হয়েও আমাদের খবরটা কেন নিচ্ছে না। আমরা কেন এতো কষ্টের মধ্যে থাকবো। আমাদেরকে আর না হয় মারেই ফেলুক। আমরা এমনিতেই মরে যাচ্ছি। আমরা কি মানুষ না। মেম্বার-চেয়ারম্যান আমাদের মানুষ মনে করে না মনে হয়। এমন অভিযোগ করে কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মধ্যপাড়ায় পানিবন্দি হানিফ মিয়া সহ ভুক্তভোগীরা। তারা ওই এলাকার দিনার মিয়ার মালিকানাধীন জায়গায় নিজ খরচে ঘর নির্মাণ করে ৫ বছর যাবৎ ভাড়া দিয়ে বসবাস করছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, গত ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে ১২টি পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষ৷ সুলতানপুর এলাকার ঢাকা কুমিল্লা হাইওয়ে সড়কের পাশের খাল ও কৃষি জমি মাটি ফেলে ভরাট করার কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়।
পানিবন্দি কাজল মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, চিড়া মুরি আর কতো খাবো, বাচ্চা কাচ্চারা খেতে চায় না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল নিয়ে। টিউবওয়েল, বাথরুম পানির তলে চলে গেছে৷ ঘরের ভিতরেও পানি। সাপের উপদ্রপ ও অনেক। মেম্বার চেয়ারম্যানকে অনেকবার জানিয়েছি তারা কেউ পাত্তা দেয়নি। ছেলে মেয়েরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। টিউবওয়েল এর ময়লা পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সরকারী কোনো সহযোগিতা পায়নি এখন পর্যন্ত। স্থানীয় ইউপি মেম্বার চেয়ারম্যান একবারও তাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি।
মুস্তাকিম মিয়ার স্ত্রী শান্তা আক্তার জানান, তিন মাসের ও দুই বছরের দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি চরম দুর্ভোগে আছেন। রান্না ঘর ডুবে যাওয়ায় দোকান থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে তাদের। ১৫ দিন ধরে কেউ এক নজর দেখতে আসেনি। পরিবারগুলোর এখন শেষ আশা ভরসা সদর উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভনের উপর।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফোর লেন এর দুই পাশের খাল ও কৃষি জমি ভরাট করে ফেলার কারনে গত দুই বছর ধরে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের জন্য ভরাট হওয়া খাল ও ভরাট হওয়া জমির মাটি দ্রুত অপসারণ না করলে বারবার জমা হওয়া বৃষ্টির পানিতে তাদের ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। বর্ষা আসলেই তাদের পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন বলেন, এ বিষয়ে কেউ তাকে অবগত করেনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছেন। তিনি আরো বলেন আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র একদিন অফিস করেছি। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করে অতিদ্রুত তিনি এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়ের চেষ্টা করবেন। এবং যারা মানবেতর জীবনযাপন করে কষ্ট করছে, তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার আস্বাস দিয়েছেন সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় আছি, বেশ কয়দিন যাবৎ আগামি ১/২ দিনের ভিতরে আসবো। পানিবন্দিদের ব্যাপারে আমাকে কেউ কোনো ইনফরমেশন দেয় নাই। পানি সরানোর সুযোগ নাই। খাল বিল যা আছে সবইতো বাড়িঘর হয়ে গেছে। ফোর লেন সড়কের জন্য সব ব্লক হয়ে গেছে, খাল ভরাট হয়ে গেছে।সোহরাব খানের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটা কেটে কালভার্ট করে দেওয়া গেলে পানিটা সরবে।
এবিষয়ে সুলতানপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রিপন মিয়া সাংবাদিকদের বক্তব্য দিতে বিমত পোষণ করলে এক পর্যায়ে তিনি বলেন রোডস এন্ড হাইওয়ের সাথে আমাদের চেয়ারম্যানকে দিয়ে কথা বলিয়েছি ড্রেন করে দেওয়ার জন্য। দুই-তিনটা কালভার্ট করে পানি নামাতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে আসলে ওনাকে নিয়ে আমরা যাব। আগা মাথা একটি ড্রেন করে পানিটা সরানোর ব্যবস্থা জরুরি করতেছি।
মন্তব্য করুন