
প্রকাশিত: ১৫ জুলাই, ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার নুসেইরাতে ফের স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৮০ জন। ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ওই স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর করা তিনটি ‘গণহত্যায়’ ১৪১ জন নিহত এবং আরও ৪০০ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
এ সংখ্যা নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার ৫৮৪ জন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ পর্যন্ত মোট আহতের সংখ্যা ৮৮ হাজার ৮৮১ জন।
এদিকে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে হামলায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গাজার কেন্দ্রে নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে জাতিসংঘ পরিচালিত আবু আরবান স্কুলে এই নিয়ে গত আট দিনের মধ্যে ইসরায়েলের পঞ্চম দফা হামলা। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘আবু আরবান স্কুলে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত লোকের আশ্রয় ছিল। হামলায় নিহতদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের বিমান বাহিনী নুসেইরাতের ইউএনআরডব্লিউএ’র আবু আরবান স্কুল ভবন এলাকায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ভবনটি ইসরায়েলি সেনাদের ওপর আক্রমণের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলেও দাবি করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে গত শনিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ জনে। এই স্থানটিকে আগে ইসরায়েল ‘সেফ জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল সীমা প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাসযোদ্ধারা। প্রায় ১৩০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে তারা। পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। যার সর্বশেষ রায়ে তেলআবিবকে অবিলম্বে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে তার সামরিক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে গত ৬ মে আক্রমণ করার আগে এক মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি যুদ্ধ থেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এ হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এর পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতাল, স্কুল কিংবা শরণার্থী শিবিরও। গত ৯ মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা।
তথ্য: তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু, বার্তা সংস্থা এএফপি, সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা
মন্তব্য করুন