নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই, ২০২৪, ০৩:১৬ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

রণক্ষেত্র বগুড়া, থেমে থেমে তাণ্ডব

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সড়ক অবরোধ, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আওয়ামী লীগ-বিএনপির দলীয় কার্যালয় ও পুলিশ ক্যাম্পে হামলাসহ অগ্নিসংযোগে বগুড়া শহরে রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে। পৃথক ঘটনায় পুলিশ-সাংবাদিক ও পথচারিসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসের আমচত্বরে ককটেল হামলায় চারজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর থেমে থেমে চলে হামলার ঘটনা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় তাণ্ডব চালায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থকরা। সাতমাথা এলাকায় অবস্থিত প্রধান ডাকঘর, মুজিব মঞ্চ ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত ৮টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় কোটাবিরোধীরা। 

এর আগে সকালে সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে ফেরার পথে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে হামলা চালানো হয়। ওই কলেজে ব্যাপক ভাঙচুরের সময় এক সাংবাদিকের মোটরসাইকলে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। একই সময়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে গিয়ে আধাঘন্টা অবরোধ করে। দুপুরে বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। তাদের কাছ থেকে ব্যানার ও প্লেকার্ড কেড়ে নেয়। 

জানা গেছে, দুপুর আড়াইটার দিকে সাধারণ ছাত্রবেশে কিছু তরুণ লাঠিসোটা নিয়ে শহরের সাতমাথা সংলগ্ন বগুড়া জিলা স্কুলের ভেতরে যায়। বিষয়টি জানার পর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। এসময় জিলা স্কুল কর্তপক্ষ মূল ফটক তালাবদ্ধ করে দেয়। ওই স্কুলের ভেতরে আন্দোলনের সমর্থকরা আটকা পড়ার খবর পেয়ে তাদের সহযোগিরা মিছিল নিয়ে সাতমাথা চত্বরে এলে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া করতে যায়। সে সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কোটাবিরোধীরা পিছুপা হয়। কিছুক্ষণ পর জিলা স্কুলের পেছন দিয়ে তারা প্রাচীর টপকিয়ে ভেতরে যায়। পরে সম্মিলিত ভাবে স্কুল গেটের তালা ভেঙে বাইরে আসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সেখানে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ করা হয়। 

কোটাবিরোধীরা সাতমাথা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার পরপরই একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি মুজিব মঞ্চ ও তার পাশে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, হামলা চালিয়ে ভাংচুর, পাশেই জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাংচুর এবং অফিসের আসবাবপত্র বাহিরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ অফিসের নিরাপত্তায় রাখা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সময়ে বগুড়ার প্রধান ডাকঘর ও সাতমাথার আশেপাশে থাকা ফুটপাতের অসংখ্য দোকান ভাংচুর করে কোটাবিরোধীরা। 

শহরের নবাববাড়ি রোডে জেলা বিএনপি ও শহরের টেম্পল রোডে শহর বিএনপি অফিসের তালা ভেঙে আসবাবপত্র বের করে রাস্তায় রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। থেমে থেমে চলা হামলার ঘটনায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানপাট ও সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। শহর জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের নেতৃত্বে যুবলীগ লাঠিশোটা নিয়ে মিছিল বের করে।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, ছাত্রলীগের কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করেনি। তারা বিনা উস্কানিতে প্রথমে শাহ সুলতান কলেজে এবং পরে সাতমাথায় এসে আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। এটা কোনভাবেই কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্তদের কাজ নয়, শিবির ও ছাত্রদল মিলে তাণ্ডব চালিয়েছে। 

জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই। কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপি অফিসে ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। 

বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান পিপিএম বলেন, ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষার্থীদের ওপর বল প্রয়োগ না করে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে। 

 

মন্তব্য করুন