
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
১৪ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট । রায়ের পরই কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে সহিংস হয়ে উঠতে থাকে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে এক পর্যায়ে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় ১৮ জুলাই। ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলন ঘিরে যা ঘটেছিল তুলে ধরা হল।
কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে শুরু হয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৭ জন নিহত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। এতে আহত হয় প্রায় চার শতাধিক।
আগেরদিন ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।
১৯ জুলাই (শুক্রবার); আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে দিনভর সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল এবং থমথমে। একইসাথে দেশের বিভিন্ন জেলাতে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়। সেদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুলি ও সংঘর্ষে নিহত হয়। সারা দেশে আহত হয় শিক্ষার্থী, নেতা-কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দফা না মানা পর্যন্ত ‘শাটডাউন’চলবে।
২০ জুলাই (শনিবার); দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন করা হয়, একইসাথে আসে সাধারণ ছুটির ঘোষণা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা ও মিরপুর ছিল ঢাকার হট স্পট। সংঘর্ষে শনিবার নিহতের ঘটনা ঘটে ।
২১ জুলাই (রোববার); চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রদান করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, কোটা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।
২২ জুলাই (সোমবার); কোটা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপন অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সোমবার সংঘর্ষে বেশ কয়েজজনের নিহতের খোঁজ পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ৬ জন সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নারায়ণগঞ্জে ৪ জন গত শনিবার মারা যান, যাদের লাশ উদ্ধার করা হয় সোমবার। আর রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) গত শুক্রবার ৪টি মরদেহ নেয়া হয়েছিল বলে সোমবার খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য এদিন জানা যায়।
২৩ জুলাই (মঙ্গলবার); কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় । মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে প্রায় শতাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। মৃত্যুর এই তথ্য হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া গেছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতাকারীদের সর্বশক্তি দিয়ে চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একইসাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারফিউ তুলে দিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
আরবি/এস
মন্তব্য করুন