
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই, ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে এখন থেকে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। নতুন এই কোটা বিভাজনে থাকছে না মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি, নারী ও জেলা কোটা।
প্রজ্ঞাপনটি গতকাল মঙ্গলবার জারি হয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান। এই প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যদিয়ে আপিল বিভাগের রায় সরকার প্রতিপালন করেছে বলেও জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারের নেই।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার, যা এখনও বহাল আছে। এর মধ্যে গত রোববার সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন দেখে তারা তাদের পরবর্তী অবস্থান জানাবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে সরাসরি নিয়োগে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি পদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। ফলে বাদ পড়লো মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি, নারী ও জেলা কোটা।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, নির্ধারিত এই কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে কোটার শূন্য পদও সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।
১৯৭২ সাল থেকেই বিভিন্ন হারে সরকারি চাকরিতে কোটা চলে আসছে। সরকারি চাকরিতে ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় মূলত ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এই অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে এ কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনিদের যুক্ত করা হয়।
২০১৮ সালে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সব কোটা বাতিল করা হয়। তবে ১৪তম থেকে ২০তম গ্রেডে (মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) কোটা ছিল। যদিও প্রতিষ্ঠান ভেদে এসব পদের কোটায় কিছু ভিন্নতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগও হয় আলাদা নিয়োগ বিধিতে।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে রোববার আপিল বিভাগ যে রায় দেন, তাতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগে ৯৩ শতাংশ মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়। বাকি পদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। তবে রায়ে আদালত বলেছেন, এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে ও সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।
মন্তব্য করুন