বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২ জুন, ২০২৪, ০৩:০১ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

রুপালী বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী

আটকে পড়ারা আগামীতে অগ্রাধিকার পাবে

ছবি সংগৃহীত

কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার শেষ সময় ছিল গত শুক্রবার। কিন্তু ভিসা, পাসপোর্টসহ সবকিছু ঠিক থাকার পরও প্লেনের টিকেট না পাওয়ায় বাংলাদেশের অনুমোদনকৃত ৩১ হাজার ৭০১ জন কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। ভিটে-মাটি বিক্রি করে টিকেটের জন্য লাখ টাকা খরচ করেও মালয়েশিয়া যেতে না পারা এসব কর্মীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে কর্মীদের পরিবারেও। কি হবে এই ৩১ হাজার ৭০১ জন কর্মীর? তারা কি যেতে পারবেন?


এসব প্রশ্নে রুপালী বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপে আশার কথা শুনিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে আমরা মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আমরা সময় বৃদ্ধি নিয়ে আগেও একটি চিঠি দিয়েছিলাম। এখন যেসব শ্রমিক আটকে পড়েছেন; তাদের তালিকা নিয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চিঠিও পাঠাবো। এ ছাড়া পরবর্তীতে মালয়েশিয়াসহ অন্য কোন দেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে দিক-নির্দেশনা পাওয়া গেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ দেয়া হবে। 


এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক আন্তরিক মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা গত ১৫ মে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছি। কতজন ভিসা পেয়েছে, কতজন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুত-এই বিষয়ে তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিশেষ ফাইটের ব্যবস্থা করেছি।  


লাখ লাখ টাকা নিয়েও টিকেট না দিয়ে কর্মীদের পথে বসানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটি করবো। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে; তাদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

২১ মের পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটির তথ্য বলছে, মন্ত্রণালয় আরো এক হাজার ১১২ জন কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। গত ৩০ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ৩০ মে পর্যন্ত ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন।


আটকে থাকা কর্মীদের বিষয়ে বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সভাপতি আবুল বাশার বলেন, আমরা এ বিষয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা দু-এক মাস সময় বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তাহলে সব কর্মীকে পাঠানো যেত। কারণ কর্মীরা যেতে না পারলে তাদের আর্থিক তি হবে। 


এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার বলেন, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। শুক্রবার (গতকাল) কর্মীরা পৌঁছানোর পর যারা বাকি থাকবেন তাদেরকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


তিনি আরো বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও ১৪টি দেশ একই সমস্যায় পড়েছে। আমরা আমাদের সিংহভাগ কর্মীদের পাঠাতে সম হয়েছি। সময় বাড়ানোর সুযোগ না থাকলেও আমরা এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।


এদিকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বুধবার থেকেই হাজারো কর্মীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অধিকাংশের অভিযোগ, ট্রাভেল এজেন্টদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দেওয়ার পরও তারা টিকেট পাচ্ছেন না। এজেন্টরা শুধু আজ-কাল বলে শেষমূহূর্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।


সবকিছু ঠিক থাকার পরও নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাসিন্দা মো. সাইফুল্লাহ টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে বলেন, আমার ভিসা, পাসপোর্টসহ ওয়ার্ক পারমিট আছে। কিন্তু টিকেট নেই। মালয়েশিয়া যেতে না পারলে আত্মহত্যা করব। তবুও বিমানবন্দর ছাড়ব না। তার মতো আরো ২৪ জন মালয়েশিয়াগামী কর্মীরও প্রায় একই কথা। 


এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের সময় ঘনিয়ে আসায় বাড়তি দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগ করেছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এ বিষয়ে গত রবিবার বিমানের টিকিট বাণিজ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করেন একটি ট্রাভেল কোম্পানির কর্মকর্তা।

অভিযোগে বলা হয়, মালয়েশিয়া যেতে বিমানের বিশেষ ফাইটে সরাসরি টিকিট করতে পারছে না এজেন্সিগুলো। গেøাবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (জিডিএস) ফাইটের টিকিট দেখাচ্ছে না। এই সুযোগে বিমানের কর্মকর্তারা দুর্নীতি করছেন। এতে টিকিটের দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।


বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন।

মন্তব্য করুন