খুলনা ব্যুরো

প্রকাশিত: ২৬ মে, ২০২৪, ০৯:৫২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’

আতংকে খুলনা উপকূলীয় এলাকার মানুষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের ধেয়ে আসার আশঙ্কায় খুলনার উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল রবিবার সকাল থেকেই খুলনার দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার মানুষদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুপুরের পর থেকেই উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষ ও গবাদি পশুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৩ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এদিকে গতকাল রোববার সকাল থেকেই জেলার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। অপরদিকে, খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে বিভাগীয় মনিটরিং সেল। ফায়ার সার্ভিসের  ৩০টি টিমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকরা জানান,দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন পুরো ছুতারখালী ইউনিয়নই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাঁধের পাশে বসবাসকারী গ্রামবাসী আখতারুজ্জামান ও বিল্লাল হোসেন জানান, আইলার সময় ঘাঁটাখালি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর প্রায় দুই মাস আশ্রয় কেন্দ্রে থাকেন। সেখান থেকে বাঁধের উপরে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের কথায় বাঁধের স্লোবে পুনরায় ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। আইলার ১৫ বছর পরেও তারা নিজ ঠিকানায় ফিরতে পারেননি। সেখানে বাঁধের পাশে প্রায় শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারা ঘূর্ণিঝড় রেমালের ১০ নম্বর সংকেত শোনার পর চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আছের আলী মোড়ল জানান, তার ইউনিয়নের ঘড়িলাল থেকে চরামুখা খেয়াঘাট এবং খেয়াঘাট থেকে হলদিবুনিয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁর্কিপূর্ণ।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-২ (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম তার অধিনে বেড়িবাঁধ বিষয়ে জানান, কয়রা, পাইকাছা ও দাকোপ উপজেলার ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। তবে যদি জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানে তাহলে জোয়ারের তাণ্ডবে ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, গতকাল রবিবার সকাল ১১টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ, চিড়া, মুড়ি, গুড় পানিসহ শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ৮০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬টি মেডিক্যাল টিম মাঠে কাজ করছে।

তিনি জানান, দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য গত শনিবারের মধ্যেই ৬০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লা ও ৫ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) স্বেচ্ছাসেবকরাও উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপপরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৩০টি টিম গত শনিবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। এরমধ্যে খুলনায় ১৪টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। যারমধ্যে একটি রিভার ফায়ার স্টেশন আছে। এছাড়া বাগেরহাটে ১০টি এবং সাতক্ষীরায় ৬টি ফায়ার স্টেশনের টিম কাজ করছে। এছাড়া খুলনা সদরদপ্তরে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে ২০ সদস্যের স্পেশাল টিম।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনায় দুপুর ৩টার পর থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে এর আগে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলার খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন