ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২ মে, ২০২৪, ০৪:২৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

কাঠালিয়ার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাহারুম মিয়া । ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাহারুম মিয়া ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার চেঁচরী রামপুর ইউনিয়নের দক্ষিন চেঁচরী গ্রামের মৃত্যু আবদুর রশীদ হাওলাদারের ছেলে ও ৭৯নং উত্তর বাঁশবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তার বিরুদ্ধে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া, নিলাম না হওয়া সত্বেও সরকারি ভবন বিক্রি করার কথা বলে টাকা নেয়া, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা, বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে সুদে টাকা এনে ফেরত না দেওয়া, স্কুলে না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা ও শিক্ষা অফিসারের সাথে খারাপ আচারণসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। কোন কিছুতেই তার লাগামহীন অন্যায় স্বেচ্ছাচারিতা থামছেই না। অন্যের স্ত্রী ছনিয়া আক্তার নামের এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করে স্কুলে না এসে বরিশাল শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন।

প্রতিদিন ব্যাংক ও অন্যান্য পাওনাদাররা বাড়ীতে এসে ফিরে যাচ্ছে। এক পাওনাদার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার চেঁচরী রামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের বাসিন্ধা মো. হুমায়ুন কবির ওরফে সিদ্দিক জমাদ্দারের ছেলে ইমরান হোসেন রিমনকে তার স্কুলে ২/৩ মাসের মধ্যে কেরানি পদে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চার লক্ষ টাকা নেয় প্রধান শিক্ষক সাহারুম মিয়া। ৩/৪ মাস অতিবাহিত হয়ে যায়, চাকরির খবর নেই এবং সাহারুম মাস্টারেরও খবর নেই। পরে তিনি খবর নিয়ে জানতে পারেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাড়া অন্য পদে নিয়োগ বন্ধ। প্রায় তিন বছর আগে এ টাকা নেওয়ার পর থেকে সাহারুম মাস্টার উধাও। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং টাকাও ফেরত পাচ্ছেনা। অনুপায় হয়ে প্রতারণার এ ঘটনা ঝালকাঠি পুলিশ সুপার এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রতিকার কামনা করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, ৭৯ নং উত্তর বাঁশবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নিলাম দেওয়ার কথা বলে উপজেলার মহিষকান্দি গ্রামের সামসুল হকের ছেলে রাজমিস্ত্রী জালাল হোসেনের নিকট থেকে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় নেন প্রধান শিক্ষক সাহারুম মিয়া। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ভবনটি নিলাম হয়নি। নিলাম ২/১ বছরেও হবার সম্ভাবনাও নেই। 

পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের লাকি জমাদ্দারের নিকট থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা, বাঁশবুনিয়া গ্রামের আঃ মন্নান হাওলাদারের এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা, একই গ্রামের মিনতি রানীর এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, পশ্চিম আউরা গ্রামের আবুল কালামের ৫ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের সালাম জমাদ্দারের স্ত্রীসহ বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা এনে তা ফেরত দিচ্ছেনা। 

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে দশ লক্ষ, রুপালী ব্যাংকে ১৫ লক্ষ এবং আমুয়া অগ্রণী ব্যাংক থেকে আড়াই লক্ষ টাকা এবং এনজিও আমানত থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেনা। পাওনাদার ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, উপজেলার আবদুস ছোমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম সাইদুর রহমানের মেয়ে ও অন্যের স্ত্রী ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক ছনিয়া আক্তারকে ব্লাক মেইল করে  তাকে বিয়ে করেন সাহারুম মাস্টার। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্ধ হলে সাহারুমকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয় ছনিয়ার আত্মীয়রা। 

জালাল হোসেন জানান, “হেড মাস্টার সাহারুম মিয়া নিলামে স্কুল ভবন (দালান) আমাকে পাইয়ে দেয়ার কথা বলে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। এ সময় কাগজে আমার সইও নিয়েছে। এখন ভবন (দালান)ও পাইনা, টাকাও পাইনা। আমি গরীব মানুষ, কি করবো বুঝতে পারছিনা।”

ভান্ডারিয়া পৌর শহরের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের লাকি জমাদ্দার জানান, ভান্ডারিয়ার এক পাওনাদারের হাতে আটক হওয়ার পর উদ্ধার পেতে চেকে স্বাক্ষর দিয়ে আমার নিকট থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নেয় সাহারুম মাস্টার। ব্যাংক থেকে লোন উঠিয়ে টাকা দেওয়ার কথা। দুই বছর হয়েছে টাকা পাচ্ছিনা। বহুবার স্কুলে ও বাড়ীতে গিয়েও তার সন্ধান পাচ্ছিনা। বাধ্য হয়ে কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সোনালী ব্যাংক কাঁঠালিয়া শাখার ম্যানেজারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

কাঠালিয়া সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম জানান, আমাদের ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে না। মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলে, ব্যাংকে আসেনা। ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করছেনা।
কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সাহারুম মাস্টারের আচার আচরণ মোটেই শিক্ষক সুলভ নয়। মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত হয়ে আমার সাথে খারাপ আচারণ করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।

কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নেছার উদ্দিন জানান, ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল ফাঁকি, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে খারাপ আচরণ, ব্যাংক এনজিও ও বিভিন্ন জনের নিকট থেকে অর্থ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ আছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাহারুম মাস্টারের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোন একাধিবার কল করলেও তা তিনি রিসিভ করছেনা।

 

 

মন্তব্য করুন