রূপালী বিশ্ব

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই, ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

কে এই ঊষা চিলুকুরি

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট অর্থাৎ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছেন জে ডি ভ্যান্সকে।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালে ‘শ্বেতাঙ্গ আমেরিকায় সামাজিক অবক্ষয়’ শীর্ষক এক অধ্যয়ন গোষ্ঠী (স্টাডি গ্রুপ) আয়োজন করেছিল কানেটিকাট রাজ্যের ইয়েল ল স্কুল। আয়োজক ছিলেন দুই শিক্ষার্থী। তাদের একজন বেড়ে উঠেছিলেন ওহাইওর গরিব এলাকায়, যার মা ছিলেন মাদকাসক্ত, বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। দাদা-দাদীর কাছে যার বেড়ে ওঠা, সেই শিক্ষার্থীটিই ছিলেন জে ডি ভ্যান্স; আজ যিনি ওহাইওর সেনেটর।

জেডি ভ্যান্সের জীবনে ‘ধ্রুবতারা’ হয়ে এসেছেন ঊষা চিলুকুরি। সেই ইয়েল ল স্কুল থেকে সেনেট পর্যন্ত জে ডি ভ্যান্সের জীবনযাত্রার প্রতিটি স্তরে, তা আধ্যাত্মিক কিংবা রাজনৈতিক-যাই হোক না কেন, স্ত্রী ঊষাই ছিলেন অনুপ্রেরণা। সেকথা নিজেই স্বীকার করেছেন ভ্যান্স।

ভ্যান্সের সঙ্গে উষার প্রথম দেখা হয় ২০১৩ সালে ইয়েল ল স্কুলে। তারা দুজনই খ্যাতনামা ওই ল স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে জিও নিউজটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শ্বেতাঙ্গ শাসিত আমেরিকায় সামাজিক অবক্ষয়’ বিষয়ে একটি আলোচনা দলে তারা দুজনই যুক্ত হয়েছিলেন।

আর ইয়েল স্কুলের সেই অধ্যয়ন গোষ্ঠীর অপর শিক্ষার্থীটি ছিলেন ঊষা চিলুকুরি ভ্যান্স। যিনি ভারতীয় হিন্দু অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান। সেইসময় ঊষা ছিলেন জে ডি ভ্যান্সের প্রেমিকা। আজ তিনি তার স্ত্রী। ঊষা পেশায় আইনজীবী। চিলুকুরি পরিবার আদতে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সান দিয়েগোতে বড় হয়েছেন ঊষা। তার বাবা ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মা বায়োলজিস্ট। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানদিয়াগোর শহরতলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা উষা একসময় নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট ভোটার ছিলেন।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক হওয়ার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন ঊষা। পড়াশোনায় ছিলেন তুখোড়। ইয়েল জার্নাল অব ল অ্যান্ড টেকনোলজির সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

কাজ করেছেন ইয়েল ল জার্নালের ডেভেলপমেন্ট এডিটর হিসাবেও। এর পর কেমব্রিজে গেটস ফেলো হিসেবে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যান। কেমব্রিজে থাকার সময় বিভিন্ন বামপন্থি ও উদারপন্থি দলের সঙ্গে ঊষার যোগাযোগ ছিল। সে সময় খাতায়কলমে ডেমোক্র্যাট হিসাবে পরিচিতি ছিল তার।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের অধীনেও কাজ করেছেন ঊষা। ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময়ে ভ্যান্সের সঙ্গে ঊষার আলাপ-পরিচয়ের পর ২০১৪ সালে কেন্টাকি শহরে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি মেনেই। ৬ বছর, ৪ বছর এবং ২ বছরের তিন সন্তান রয়েছে তাদের।

ঊষার সঙ্গে প্রথম দেখাতেই ভ্যান্স হয়েছিলেন অভিভূত। তার গুণাবলীতে হয়েছিলেন মুগ্ধ। ভ্যান্স এ সম্পর্কে তার স্মৃতিকথা ‘হিলবিলি এলেজি’তে লিখেছেন, “বৈশিষ্ট্যগতভাবেই তাকে ব্যতিক্রমী মনে হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল সব ইতিবাচক গুণ, যা একজন মানুষের থাকা দরকার। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান, কঠোর পরিশ্রমী, লম্বা আর সুন্দরও সে।”

ভ্যান্সের এই বইটি ২০১৬ সালে সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায় স্থান পায়। ২০২০ সালে রন হাওয়ার্ডের পরিচালনায় এই স্মৃতিগ্রন্থ অবলম্বনে সিনেমাও তৈরি হয়।

৩৯ বছর বয়সী ভ্যান্স বলেছেন, তিনি স্ত্রী উষাকে তার ‘ইয়েল তাত্ত্বিক গুরু’ মনে করেন। ভ্যান্স প্রথমে একজন প্রটেসট্যান্ট হলেও ২০১৬ সালে তিনি ক্যাথলিক ধর্মে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। স্ত্রী ঊষার কারণেই তিনি ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলেন।

জে ডি ভ্যান্সের কথায়, তিনি জন্মগতভাবে খ্রিস্টান হলেও কখনও ধর্মপালন করেননি। ২০১৮ সালে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানতে শুরু করেন। স্ত্রী ঊষা তাকে ধর্মানুরাগী হতে সহায়তা করেছিলেন।

২০২০ সালে মেগিন কেলি শো পডকাস্টে ভ্যান্স বলেছিলেন, ‘ঊষা আমাকে নিশ্চিতভাবেই একটু একটু করে বাস্তবে ফিরিয়ে এনেছে। আমি কিছুটা অহংকারী হয়ে উঠলে বা নিজেকে নিয়ে সামান্য গর্বিত হলে কেবল নিজেকে একথা মনে করিয়ে দিই যে, সে (ঊষা) আমার চেয়ে অনেক বেশি কিছু অর্জন করেছে।”

ঊষার মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে কতটা সৌভাগ্যবান সেকথাও মেগিন কেলি শো’তে বলেছিলেন ভ্যান্স। ঊষাকে তিনি বর্ণনা করেছিলেন একজন ‘প্রভাবশালী নারী’ হিসাবে।

মন্তব্য করুন