
প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঈদযাত্রায় কোনো ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। ঘরমুখো মানুষের সংখ্যাও ছিল কম। তবে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও বাস ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ঈদযাত্রায় গ্রামে ফেরা মানুষের চাপ না বাড়লেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রী সাধারণ।
শনিবার বিকেলের দিকে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর ও জিরানীবাজার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ঈদযাত্রায় শেকড়ের টানে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ দেখা যায়নি। তাতেও বাড়ানো হয়েছে বাসের ভাড়া। জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ কিংবা এর চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি যাত্রীদের।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে স্বাভাবিকের তুলনায় যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই কোনো যানজট। ফলে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন। দুপুর পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যায়। তবে সোমবার থেকে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন যানবাহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।
একই চিত্র পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথেও। যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঈদে ঘরমুখী মানুষ নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে নৌপথ পারাপারে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বৈরী আবহাওয়া না থাকলে এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামের বাড়ি ফিরতে পারবেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, জাগীর পুলিশ ক্যাম্প, গোলড়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে মহাসড়কের পাটুরিয়া ফেরিঘাটমুখী যানবাহনের তেমন চাপ নেই। কিছুক্ষণ পর পর দূরপাল্লার বাস স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৭২ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত, বগুড়ার ভাড়া ৫৫৮ টাকা, নাটোর ৫৯৩ টাকা, পাবনা ৬৪৬ টাকা, নওগাঁ ৭০১ টাকা, রাজশাহী ৭১২ টাকা, জয়পুরহাট ৭১২ টাকা, রংপুর ৮৭৯ টাকা, দিনাজপুর ৯৪০ টাকা, লালমনিরহাট ৯৯৪ টাকা, কুড়িগ্রাম ১০০২ টাকা, নীলফামারী ১০১৬ টাকা, ঠাকুরগাঁও ১০৯৫ টাকা ও পঞ্চগড় ১২৩৫ টাকা। তবে এ ভাড়ার চেয়ে প্রতিটি গন্তব্যস্থলে যেতে হলে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষকে।
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে নাটোরের দুটি টিকিট নিশ্চিত করেছেন চাকুরীজীবি কামাল হোসেন। তিনি গ্রামের উদ্দেশে পোশাকশ্রমিক স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে ঈদযাত্রা করবেন। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৫৯৩ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও তাকে প্রতিটি টিকিট ক্রয় করতে হয়েছে ৯৫০ টাকা দরে।
কামাল বলেন, ‘আমি নাটোরে যাব। আগে কাউন্টারে টিকিট কিনে চেয়ারকোচে বাড়ি যেতাম। আজ এসে দেখি ওইসব কাউন্টারে টিকিট নেই। পরে লোকাল গাড়ির ৯৫০ টাকা করে ১ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে দুটি টিকিট কিনেছি। সময় যত গড়াবে তত ভাড়া, যানজট ও ভোগান্তি বাড়বে। তাই কিছু টাকা বেশি গেলে কিছু করার নেই।’
কাউন্টারে গেলে কাউন্টার মাস্টার বলেন, টিকিট অনলাইনেই শেষ হয়ে গেছে। অগ্রিম টিকিট আরও আগেই কিনে রেখেছে যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই পরিবারকে গ্রামে পাঠালাম।
এ ব্যাপারে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকার আজিজ পাম্পসংলগ্ন শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বলেন, ‘আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। আমরা শুধু যাত্রীদের তুলে দেওয়ার জন্য কাউন্টার খুলে রেখেছি। যাত্রীরা আসছেন আমরা গাড়িতে তুলে দিচ্ছি। এখান থেকে দুই একটি টিকিট বিক্রি করছি। যাত্রীর চাপ নেই, টিকিট বিক্রি করব কার কাছে।’
হাইওয়ে পুলিশপ্রধান ও অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। আমরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৮ হাজার ৭১০টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে পার হয়েছে ১৬ হাজার ১৭৪টি যানবাহন। আর উত্তরবঙ্গের দিকে পার হয়েছে ১২ হাজার ৩৩৬টি যানবাহন।
টাঙ্গাইল ট্রাফিক পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম সরকার জানান, স্বাভাবিকের তুলনায় এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। যানবাহন স্বাভাবিক গতিতেই চলাচল করতে পারছে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি এম এ ওদুদ বলেন, ‘এই ওভারপাস ও সেতুগুলো খুলে দেওয়ায় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। আশা করছি আমাদের এলাকায় আর কোনো যানজট বা দুর্ভোগের শঙ্কা থাকবে না।’
পাটুরিয়াগামী যাত্রী হৃদয় বলেন, ঈদের দু-এক দিন আগে গ্রামের বাড়িতে যেতে অনেক সমস্যা আর ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ জন্য পরিবার নিয়ে এখনই গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গায় যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে সড়ক পথে বা ফেরিঘাট এলাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা খুবই কষ্টের। এ জন্য ভোগান্তি এড়াতে আগেই গ্রামের বাড়িতে রওনা হয়েছি।
গোল্ডেন পরিবহনের আরেক যাত্রী সুমন বলেন, পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে প্রতি বছরই ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে যাই। অনেক ঈদযাত্রায় ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে মহাসড়ক ও ফেরিঘাট এলাকায়; কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে এই রুটে যানবাহনের চাপ অনেক কম।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুকেন্দ বসু বলেন, ‘ঈদে মানুষজন গ্রামের বাড়িতে যেতে শুরু করছে। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের অংশের যানবাহনের কোনো চাপ নেই। ঈদের দু-এক দিন আগে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগরসহ ওই অঞ্চলের পোশাক কারখানা ছুটি হলে যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়বে। তবে মহাসড়কে যানজটমুক্ত রাখতে জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও কাজ করবে। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখী যাত্রীদের সড়ক পথে তেমন ভোগান্তি হবে না।’
জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) কে এম মিরাজ বলেন, ঈদযাত্রায় ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপদ যাতায়াতের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সুপার আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিটিসি) আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘গত শুক্রবার ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও নৌবহরে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হয়েছে। আজকে সকালের দিকে কিছু যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ি ছিল, তবে ঘাটে আসামাত্রই ফেরিতে উঠে নদী পার হয়েছে। আজকে ১৩টি ছোট-বড় ফেরির মধ্যে ১১টি ফেরি নৌপথে চলাচল করছে। ঈদযাত্রায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে আরও দুটি ফেরি আমাদের বহরে এসে যোগ দেবে। আশা করছি, ভোগান্তি ছাড়াই এবার ঘরমুখী মানুষ ও যানগুলো নৌপথ পারাপার হতে পারবে।’
শঙ্কামুক্ত উত্তরের ঈদযাত্রা
উত্তরের ঈদযাত্রা নির্ঝঞ্ঝাট করতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে খুলে দেওয়া হয়েছে তিনটি ওভারপাস ও একটি সেতু। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সে ওভারপাসগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
উদ্বোধন হওয়া ওভারপাসগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের মুলিবাড়ি ওভারপাস, পাচিলা ওভারপাস, ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দাঁতপুর ওভারপাস ও ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দাঁতিয়া সেতু।
মন্তব্য করুন