
প্রকাশিত: ১ আগষ্ট, ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
অনেকগুলো জীবন ঝরে গেল, ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিগুলো কীভাবে লাগলো, প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন কোটা আন্দোলন চলাকলিন দোতলা বাড়ির মধ্যে জানালার কাছে ছিল ছেলেটা। তার গুলি লেগেছে। তারা বলে হেলিকপ্টার থেকে গুলি লেগেছে। আপনারা বলেন, হেলিকপ্টারের গুলি ঘরের মধ্যে ঢুকবে কীভাবে? আর সেই গুলি ঢুকে কিন্তু দেয়ালে যেয়ে ফুটো করে দিয়েছে। সেখানে তদন্তের জন্য লোক গেছে। তারা দেখে, সেখানে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করল কীভাবে!
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে 'জাতীয় শোক দিবস স্মরণে' আলোচনা সভায় তিনি বলেন হত্যাচেষ্টাসহ নানা প্রতিকূলতার পথ পেরিয়ে ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। সেই সঙ্গে, জাতির পিতার হত্যার বিচার করে, বিচারহীনতার যে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, আবার সেই আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করেছি। এটা করতে গিয়ে সেখানেও অনেক হুমকি-ধমকি সহ্য করতে হয়েছে । তবুও আমরা করতে পেরেছি। এটাই সব থেকে বড় কথা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই আমরা এই খুনিদের বিচার করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পঁচাত্তরের পর সেই ২১ বছর এবং তারপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮, এই ২৯ বছর কিন্তু বাংলাদেশ এক ইঞ্চি সামনের দিকে এগোতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখনই এই বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে।
কোটা আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে। আমরা এটা মেনে নিয়ে বাতিল করে দিয়েছিলাম কোটা পদ্ধতি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মামলা করল, সেখানে আমার করা প্রজ্ঞাপনটা বাতিল করে দিলো হাইকোর্ট। সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করা হলো। কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখও দেওয়া হলো। ৫ জুন এই রায় হয়েছিল। জুলাই মাসে ৭ তারিখ থেকে হঠাৎ দেখি আবার আন্দোলন যখন কোটা পদ্ধতি নাই, বলেন তিনি।
আন্দোলনের পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন পুলিশ আটকা পড়লো। যখন বিটিভিতে, এখানে-ওখানে আগুন দিচ্ছে একটার পর একটা, আমরা হেলিকপ্টার থেকে সেখানে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। কারণ ফায়ার ব্রিগেড যেতে পারে না। আমার সব থেকে আধুনিক ফায়ার ব্রিগেডের যে গাড়িগুলো, সব পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষগুলোকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে। তখন বাধ্য হয়ে হেলিকপ্টার থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে আমরা চেষ্টা করলাম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কোটা পদ্ধতি নাই কিন্তু তখনই আন্দোলন। দেখা গেল ঝাঁকে ঝাঁকে সব জড়ো হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক থেকে শুরু করে, গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে অনেক শিশুদের নিয়েও হাজির হচ্ছে। আমার খুব সন্দেহ হলো, এটা পেছনে অন্য কিছু আছে। আমি সেটা বলেও ছিলাম। তাহলে এই ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে!
তিনি বলেন, জনগণ একটু আরামে থাকবে, জনগণ একটু ভালো থাকবে, সুস্থভাবে চলবে, সুপেয় পানি-পয়োঃনিষ্কাশন থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় আগুন দিয়ে পোড়ানো হলো। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? আর সেই সাথে আজকে কত মানুষের জীবন গেছে! চারিদিক থেকে অস্ত্রধারী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ কামরা, সেখানে এখন ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে হাতে অস্ত্রসহ; কারও হাতে তরবারি, কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে শাবল নিয়ে পুরো তছনছ করেছে। ছেলেদের সব জিনিসগুলো পুড়িয়ে দেওয়া। মেয়েদের হোস্টেল; রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজে মেয়ে হয়ে দলের মেয়েদের ওপর যে টর্চার, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে টর্চার করেছে, ঠিক সেই ধরনের টর্চার করল মেয়েদের ওপর।'
'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা ছাত্রলীগ করে, ছাত্রলীগ করতে পারবে না। তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার। এক মেয়েকে ১০০ বার উঠবস করাল। একজন মহিলা সাংবাদিককে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে, তাকে উলঙ্গ করে, তার ওপর পাশবিক অত্যাচারসহ এমন কিছু নেই। তিনজন সাংবাদিকের ওপর এই অত্যাচার করেছে। এদের হাত থেকে সাংবাদিক রেহাই পায়নি, সাংবাদিক হত্যা করেছে। সাংবাদিককে মারধর করেছে। সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেউ তো রেহাই পায়নি, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, 'এই আন্দোলনকে আবার আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কীসের সমর্থনটা দিচ্ছে? দাবি যেটা ছিল সেটা তো পূরণ হয়ে গেছে। তারপর আবার এভাবে নেমে আসলে আঘাত পায় তো সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী।
আরবি/এস
মন্তব্য করুন