বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

তালতলীতে গোপন ভিডিও করা নিয়ে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা

ছবি সংগৃহীত

বরগুনার তালতলী উপজেলার একাধিক জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের গোপন ভিডিও করা নিয়ে তালতলী থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে। এই ঘটনার অভিযোগে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখা দুই জনকে আটক করেছে। এই ঘটনায় প্রাথমিক ভুক্তভোগী রয়েছেন উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সহ প্রমুখ। 

গতকাল শুক্রবার রাতে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী তালতলীর নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামী হলেন ইসরাত জাহান লামিয়া ঠিকানা দক্ষিণ আমতলী, জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকির ঠিকানা চন্দনতলা, ছোটবগী ইউনিয়ন। 

ঘটনার স্বাক্ষীরা হলেন, উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাক হাওলাদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিনহাজুল আবেদীন মিঠু, সজিব খান সাং চন্দনতলা ও শহীদ হাওলাদার সাং চন্দনতলা।

মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার প্রায় এক বছর পূর্বে অভিযুক্ত নারী ইশরাত তার মোবাইল ফোনের হোয়াইটস আ্যাপে কল করে। প্রথমে আমি তার ফোন না ধরলেও পরবর্তীতে ধরলে ঐ নারী আমাকে বলে আমার এক পরিচিত তাকে মনে করে ভুলবশত ফোন চলে  গেছে। এসময় নারী পরিচয় দেন তিনি বরিশালে থাকেন এবং ঢাকায় একটি এল এল বি অধ্যায়নরত।

পরিচয়ের কয়েকদিন পর ঢাকায় কাজের জন্য গেলে ১নং আসামি আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আমরা ঢাকার একটি রেষ্টুরেন্টে দেখা করি। তারপর থেকে আমার কাছে ১ নং আসামি হোয়াটসঅ্যাপে কল করতো এবং কুশলাদি বিনিময় হতো। যার ফলে আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর অনেক দিন পর অফিসিয়াল কাজ শেষে ঢাকা থেকে ফেরার পথে পারাবত লঞ্চ যোগে বরিশাল ফেরার কথা সে জানতে পেরে আমার কেবিনের পাশে সেও কেবিন করে। একসময় সে আমার কেবিনে প্রবেশ করে বলে রাতের খাবার খায় নাই। 

সরল বিশ্বাসে বাদী তাকে তার কেবিনে বসে দুই জনের জন্য খাবার অর্ডার করেন এবং একসঙ্গে খানাপিনা করে। খাবার পরে ১নং আসামিকে তার কেবিনে বাদী যেতে বললে সে সুকৌশলে তার কেবিনে শুয়ে পরে।

একপর্যায়ে আসামি তার কৌশলে তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বাদীকে জড়াইয়া ধরে গোপন ভিডিও ধারণ করে। 

বাদী তার এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, আসামি সুকৌশলে আমার সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও পরবর্তীতে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তৌফিকুর রহমান তনুর হোয়াটসআ্যপ থেকে গত বছরের ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় আমার হোয়াটসঅ্যাপ দেয়।

এ সময় সে এই মামলার সাক্ষী পচাকোড়ালিয়া চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর দুটি একই নারীর করা দুটি ভিডিও আমার হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে বলে, আমার বড় ভাই মনিরুজ্জামান মিন্টুর পক্ষে উপজেলা নির্বাচন না করলে তোমাদের ভিডিও ইন্টারনেটে ছাড়িয়া দিব। এ সময় তিনি মোটা অংকের টাকাও দাবি করে। 

এ ঘটনায় তালতলী থানার ইন্সপেক্টর রনজিৎ কুমার বলেন গতকাল রাতে এই ঘটনায় পর্নোগ্রাফি আইনের ৮(১)(২)(৩)(৫) এর (ক) (৭) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তালতলী থানার মামলা নং ৪ তারিখ ১২/৪/২০২৪। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখায় প্রেরণ করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বশির আলম বলেন, আমারা এক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে গেলে সমাজের বিভিন্ন জন প্রতিনিধি সহ রাজনৈতিক নেতাদের গোপনে আপত্তিকর ভিডিও করার পেন ড্রাইভ উদ্ধারকরি।

এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আটককৃতরা দোষ স্বীকার করে। এঘটনায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বাদী হয়ে তালতলী থানায় মামলা দায়ের করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলাটি ডিবিতে প্রেরন করে বর্তমানে বিধি মোতাবেক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

মন্তব্য করুন