
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ, ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের বিষমুক্ত মিষ্টি কুমড়া রপ্তানী হচ্ছে বিদেশে। জমি থেকে রপ্তানীকারকরা সরাসরি কৃষক থেকে কিনে চট্রগ্রাম পোর্ট দিয়ে পাঠাচ্ছেন মালএশিয়া,থাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরে। মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। দেশে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বাম্পার ফলন ও আশাতীত ভালো দাম পাচ্ছেন উপজেলার কয়েকশত কৃষক।
মিষ্টি কুমড়ায় তুলনামূলক খরচ কম। ফলন ভালো এবং লাভও বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে শরীরের পাশাপাশি ভালো থাকে ত্বক ও চুল। নিয়মিত খেলে পেটের নানাবিধ সমস্যাও কেটে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য মতে, মিষ্টি কুমড়াতে ভিটামিন এ ও সি থাকে। এ ছাড়াও ফাইবার ও পটাসিয়ামসহ নানাবিধ উপকরণে সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া। যা খেলে বাড়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও। এই সহজলভ্য সবজিটি পরিপুষ্ট অবস্থায় তোলা হলে দীর্ঘদিন ঘরেও রাখা যায়। উপকার জেনে ঝুঁকছেন মানুষ এই সহজলভ্য সবজির দিকে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে এই সবজি। বাসা-বাড়ি ও বিয়ে-শাদীর খাবার হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি মণ মিষ্টি কুমড়া পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭শ' থেকে ৮শ' টাকায়। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে অধিক মিষ্টি কুমড়া হওয়ায় প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন নতুন নতুন কৃষক।
তাড়াইল উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর প্রায় ১শ' ৯৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলার মাঠে মাঠে কৃষকরা এখন মিষ্টি কুমড়া জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করায় ব্যস্ত। পরিবারে ছোট থেকে বড় সবাই মিষ্টি কুমড়া তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার জাওয়ার হিজলজানী হাওড়ে মাঠের পর মাঠ মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি শুরু হয়েছে। দামও বেশ ভালো। উপজেলার সদর বাজার মাদরাসা মার্কেট আড়তে চাষিদের নিয়ে আসা মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করে ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে ঢাকা, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করে শত শত কৃষক এখন সচ্ছল-স্বাবলম্বী।
উপজেলার সদর বাজার মাদরাসা মার্কেট আড়তে মিষ্টি কুমড়া চাষি জাওয়ার গ্রামের বাঅন মিয়ার এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষে অধিক লাভ হওয়ায় এর চাষাবাদে তারা ঝুঁকছেন। ৪একর ৮শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে তার ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সম্ভাব্য ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করা যাবে বলে জানান তিনি।
আড়তে আরও দেখা যায় মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদেরও খুব ভিড়। ক্রেতাদের ভাষ্য, শীতকালীন প্রচুর শাকসবজির আমদানি হলেও সব কিছুর দাম বাড়তি।
উপজেলার বিভিন্ন গবরামের কৃষকরা জানান, মিষ্টি কুমড়া চাষে জমিতে পানির তেমন একটা বেশি দরকার পড়ে না। সার, নিরানি খরচও কম লাগে। গবাদি পশুর বিষ্টাকেও জৈব সারের কাজে লাগালে ভালো ফলন হয় বলে জানান তারা। বিশেষ করে মরিচ ক্ষেতের অকেজো আইলেও এর আবাদ করা যায়। পরিত্যক্ত মাঠে এর আবাদ করা যায়। আইলের ওপরেও এর আবাদ অনেক ভালো হয়। মিষ্টি কুমড়ার কয়েকজন চাষি জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া উত্তোলনের সময়ে বলেন, এখন থেকে আমরা নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করব। এতে লাভ বেশি খরচ কম। বৃষ্টি বাদলের কোনো সমস্যা নেই। কয়েকবার তোলা যায়। পাশাপাশি মরিচ ক্ষেতের আইলে এর ভালো চাষ হয় বলেও জানান।
সরেজমিন ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কৃষকেরা যে মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস বিক্রি করেন সেটা বিভিন্ন শহরে গিয়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা হয়ে যায়। তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে চলতি বছরে ভালো দাম পেয়ে তারা বেশি খুশি। কৃষি অফিসের সঠিক তদারকি, সরকারি প্রণোদনা এবং ভালো জাতের বীজের ব্যবস্থা করা হলে আগামীতে মিষ্টি কুমড়া চাষে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মতামত প্রকাশ করেন স্থানীয় কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার সাহা জানান, স্বল্প খরচে মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত লাভজনক ফসল। মিষ্টি কুমড়ার খেতে রোগবালাই কম আক্রমণ করে। আমরা কৃষকদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করে মিষ্টি কুমড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা উপযুক্ত মূল্য পেলে নানাবিধ উপকারী এই সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হবেন বলেও তিনি ধারণা করেন। কৃষকরা মূলত বাণিজ্যমুখী। যেদিকে বেশি লাভ পায় সেদিকেই মনোযোগী হয়।
উপজেলার কাঁচাবাজারের আড়তদার আবদুল আজিজ জানান,প্রতিদিন ৩৫থেকে ৪০টি ট্রাকে করে মিষ্টি কুমড়া চট্রগ্রামে, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্থে পাঠানো হয়।এই কর্মযজ্ঞ চলে বিকাল ৪টা থেকে রাত গভীর পর্যন্ত। তাছাড়া বিদেশেও আমাদের এই কুমড়ার বিপুল চাহিদা। এই এলাকার কুমড়ার গুনগত মান ভালো ও মিষ্টি।তাই সারাদেশ থেকে পাইকাররা ঝুঁকছেন আমাদের উপজেলায়।
মন্তব্য করুন