ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ, ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

দাগনভূঞায় বিদ্যালয়ের এক দশকেই ভবনে ভয়াবহ ফাটল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পলেস্তরা খসে পড়ছে, ভবনের পরতে পরতে ফাটল। ফেটে একাকার বেইজমেন্ট পিলার, শ্রেণিকক্ষ, দোতলার বারান্দা ও সিঁড়ি। বৃষ্টি হলেই ছাদ ছুঁইয়ে পড়ে পানি। পুরো ভবনে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় শতাধিক ফাটল। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র দ্বিতল ভবনের এই জীর্ণদশা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাত্র এক দশকের (১০ বছর) ব্যবধানে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই ভবনে চলছে দুই শ্রেণি কার্যক্রম ও অফিস। ২০০৯/১০ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অর্থায়নে নির্মিত হয় বিদ্যালয়টির নিচতলা। এর ১ বছর পর ২০১০/১১ অর্থবছরে নির্মান করা হয় দোতলা। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলে নির্মাণকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকির অভাবে দায়সারা ভাবেই ভবনটি নির্মান করেন আলা উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন নামের দুই ঠিকাদার।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিদ্যালয় চলাকালীন সময়েই বিদ্যালয়ে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। এরপর থেকে ক্রমাগত ফেটেই যাচ্ছে ভবনের বিভিন্ন অংশে। শতাধিক জায়গায় ফাটল থাকায় বিদ্যালয়টিতে ঝুঁকি নিয়েই চলে পাঠদান। পাশেই ছিল জরাজীর্ণ একটি ছোট টিনসেড ঘর। সম্প্রতি মেরামত করে সেখানে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। ঈদের ছুটি শেষে বিদ্যালয় খোলা হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আবারও চালিয়ে নিতে হবে পাঠদান। সাবেক জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান ও সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার তানিয়া বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন পরিদর্শন করেন। আশ্বস্ত করে গেলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ওইসময়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ থেকে ১ বান্ডিল ঢেউটিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

জানা গেছে, ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষক পন্ডিত মুজিবল হক ভূঁইয়া, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা আক্তারুজ্জামান ও মাষ্টার শামসুল হক এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়।

বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে এ ভবনটি ব্যতিত কোন ভবন নেই। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে আমি আমার ছেলেকে আর রাখবো না, আমি তাকে অন্যত্র ভর্তি করাব। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, আমরা খুবই আতংকের মধ্যে
রয়েছি। ছুটি শেষে বিদ্যালয় চালু হলে কী করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চালাব। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহ সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলী মর্তুজা বলেন, আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দাবী করছি। একইসঙ্গে তিনি মাত্র ১০ বছরে কীভাবে একটি ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিবেদিতা চাকমা বলেন, বিদ্যালয় এরিয়ার মধ্যেই বিকল্প হিসেবে একটি টিনসেড ঘর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, তবে এ বিষয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন