রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ জুলাই, ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

৩৩০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি

নাবিল গ্রুপ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে দুদকের চিঠি

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংকের তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনার বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও নাবিল গ্রুপের ১১টি কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আলোচিত ওই ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য জানতে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে গতকাল সোমবার দুদকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলামী ব্যাংক থেকে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে একাধিক চক্র। ২০১৭ সালে নতুন পরিচালনা পর্ষদ আসার পরও তা বন্ধ হয়নি। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপ, যাদের পিওন থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন কর্মচারীর নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণের খোঁজ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্ট এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজকে এই ঋণ দেওয়া হয়। তবে ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়াও নাবিল গ্রুপের ১১টি কোম্পানির নামে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তদন্তে নাবিল গ্রুপের পিওন ও বেশ কয়েকজন কর্মচারীর নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের ছাড়কৃত ঋণের বিপরীতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সরেজমিনে অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করা হয় এবং ঋণ সমন্বয় করতে পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়।

ইসলামী ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, জুবিলী রোড শাখা থেকে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও চাক্তাই শাখা থেকে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নির্বাহী কমিটির ১৯৫৯তম সভায় বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগের মেয়াদ ইতোমধ্যে অতিক্রম করায় বকেয়া স্থিতি অবিলম্বে ১৫ দিনের মধ্যে আদায় করতে হবে। আর আদায় করতে না পারলে ক্ষতিজনক, মানে খেলাপি করে জানাতে হবে। পাশাপাশি এই বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার সুপারিশ, অনুমোদন ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতেও ওই চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

নাবিল গ্রুপের ১১টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড, নাবিল কোল্ড স্টোরেজ, নাবিল ফিড মিলস লিমিটেড,নাবিল অটো রাইস মিল, নাবিল অটো ফ্লাওয়ার মিল, শিমুল এন্টারপ্রাইজ,নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাবা ফার্মা লিমিটেড, নাবিল গ্রীন ক্রপস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেস।

আলোচিত ঋণ জালিয়াতি ঘটনা অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাতের নেতৃত্বে কমিটিতে রয়েছেন আরেক উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক রণজিৎ কুমার কর্মকার।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়, ‘পর্যাপ্ত নথিপত্র ও জামানত ছাড়াই কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেওয়া হয়েছে’- এমন অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা, রাজশাহী ও নিউমার্কেট শাখাও পাবনা শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রুপের এই কোম্পানিগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, একই জেলার জুবলী রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছে দুদক।

 

মন্তব্য করুন