
প্রকাশিত: ১৩ জুন, ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ রেল সেতুর নিচে কুশিয়ারা থেকে তোলা হচ্ছে বালু। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রেজার মেশিন। আস্তে আস্তে সেতুর পিলারের চারপাশ থেকে সরে যাচ্ছে বালু। ফলে ক্রমেই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যাচ্ছে সেতুটি। এখই বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। ধেবে যেতে পারে রেল সেতু।
এই শঙ্কা শুধু স্থানীয়দেরই নয়, প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। গেল সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বালুখেকো চক্রটি এতটাই প্রভাবশালী যে, তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো বিপুল উদ্দীপনায় চলছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু সংগ্রহ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের নিদের্শদাতা ম্যাজিস্ট্রেট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, গুরুতর এ অভিযোগ পেয়ে ৬ জুন আমরা উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। এখন যদি তারা আবার সেই একই কাজ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিলে চক্রটি সেদিন সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু পরে তারা আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে বালু তোলা শুরু করেছে। এখনও নদীর সামান্য দূরে বালু তুলতে তুলতে সেতুর দিকেই আবার এগিয়ে আসছে। এই চক্রটি কুরকুচি খালের মুখ ও কুশিয়ারা নদীর মোহনা থেকে বালু তুলে কবরস্থানের সামনে নিয়ে রাখছে।
সূত্র জানায়, শুধু রেল সেতুই নয়। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালু তোলায় উপজেলার চান্দপুর-ইসলামবাজার-মানিকোনা-গোলাপগঞ্জ সড়ক, আশপাশের কবরস্থানও চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতোমধ্যে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র এই সড়কটি বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মানিকোনা, গঙ্গাপুর, মল্লিকপুর, কুতুবপুরসহ আশপাশের অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের হেঁটে বা যানবাহনে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। তাই বিপাকে পড়েছে এইসব এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও। যানবাহন দূরের কথা পায়ে হেঁটেই এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত এখন ঝুঁকিপূণ।
পাহাড়ি ঢল নামলেই ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুরকুচি খাল ও কুশিয়ারা নদীর মুখে প্রচুর পলি পড়ে। পলি পড়ায় পানি নামতে পারে না। যার ফলে এই খাল ও নদী সংলগ্ন সড়কটি ভেঙে যায়। গতবছর বন্যায়ও সড়কটি ভেঙে গিয়েছিল। তাই কুরকুচি খাল ও কুশিয়ারা নদীর মুখে পলি অপসারণের জন্য গতবছর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রস্তাবনা পাঠায় সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই প্রস্তাবনা এখনো অনুমোদন পায়নি। কিন্তু এটি অনুমোদিত হওয়ার আগেই এই প্রকল্পের নামে ড্রেজার মেশিন দিয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বালু উত্তোলন শুরু করে দিয়েছেন।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বৈধ নয়। এই কাজ করতে এক্সকেবেটর ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। যেহেতু কুরকুচি খাল ও কুশিয়ারা নদীর মুখে পলি অপসারণের প্রস্তাবনা এখনো অনুমোদিত হয়নি, তাই এই জায়গা থেকে কোনোভাবেই এখন বালু তোলা যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো ফেঞ্চুগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম বারী বলেন, প্রস্তাবটি অনুমোদন হওয়ার আগে পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে। তাছাড়া, অনুমোদন আসলেও রেলসেতুর পাশে এসে বালু তোলার অনুমোদন দেয়া হবে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গঙ্গাপুর গ্রামের ইমন আহমেদ এই বালু ব্যবসা উত্তোলন করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের সহযোগিতায় গত ৪ জুন থেকে তিনি বালু তুলতে শুরু করেন। খবর পেয়ে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে তাদেরকে বলা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমোদন পেয়েই তারা বালু তোলছেন। তারা পরে বিষয়টি লিখিত উপজেলা প্রশাসনকে জানালে প্রশাসনের তরফ থেকে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, যেখানে ড্রেজার লাগানো হয়েছে, জায়গাটিই নদী ভাঙনের শিকার। বালু তোলার কারণে সড়কটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তার কয়েকশ ফুট দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ রেলসেতু। আইন মোতাবেক কোন সেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেজার চালানো যাবে না। প্রক্রিয়াটি বে-আইনি। কিন্তু চক্রটি সেতুর কয়েকশ ফুট দূরেই মেশিন বসিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইমন আহমেদ বলেন, রাস্তা মেরামতের জন্যই যথাযত অনুমোদন সাপেক্ষেই বালু তোলা হচ্ছে। ইসলামবাজার রাস্তা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল ও মানুষজনের হাঁটার উপযোগী করতে আমরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে সড়কের পাশে দেব। অনুমোদন প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে এই কাজ করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন আছে।
রেল সূত্র জানায়, কুশিয়ারা নদীর ওপর রেলসেতুটি ঢাকা-সিলেট রেলপথের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। এ সেতুটির দেখভালে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। মাইজগাঁও রেলস্টেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেলসেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেজার চালানো বে-আইনি হওয়ায় রেলস্টেশন থেকে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন