রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার

ছবি: সংগৃহীত

সরকার মূল দাবি মেনে নেওয়ায় সব আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রোববার সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দেওয়ার সময় অন্য সমন্বয়করাও উপস্থিত ছিলেন।


ঘোষণায় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে আহ্বান জানান সমন্বয়করা। কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় আহত-নিহত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।


নাহিদ বলেন, আমাদের প্রধান দাবি ছিলো কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।


উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে তুলে নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সাম্প্রতিক ঘটনার ব্যাপারে জানার জন্য তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।


এর আগে গত শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে সাদাপোশাকে তুলে নেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে তাদেরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন জুনায়েদ আলম সরকার। তিনি বলেন, আমরা গত দুই দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব।


এর আগে গত ২০ জুলাই রাতে রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসা থেকে নাহিদ ইসলামকে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। পরদিন সকালে সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন নিয়ে বাসায় পৌঁছান নাহিদ। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নাহিদ তার ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন।


আসিফ ও বাকের দুজনকেই ১৯ জুলাই তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ফেসবুকে তারা দুজন লেখেন যে তাদের চোখ বেঁধে ২৪ জুলাই হাতিরঝিল ও ধানমন্ডি এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কে তাদের তুলে নিয়ে গেছে সে বিষয়ে কেউ উল্লেখ করেননি।
এদিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন বাকৃবি আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ ইরান মিয়া। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচি সমন্বয়ক হাসিবুল হাসান, মাজহারুল ইসলাম তুষার, প্রণব ঘোষ ও মাশশারাত মালিহা উপস্থিত ছিলেন।


সমন্বয়ক মোহাম্মদ ইরান মিয়া তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাকৃবি ক্যাম্পাসে আপাতত বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। তিনি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনোরূপ হয়রানি করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাস খোলার পর ক্যাম্পাসের নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।


আরেক সমন্বয়ক হাসিবুল হাসান তার বক্তব্যে বলেন, আমরা ক্লাশে ফিরতে চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে চায়। তারা এখন আর রাজপথে থাকতে চায় না। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আর কোনো কর্মসূচি থাকছে না। লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একটি পক্ষ ঢুকে সহিংসতা করে এবং ভাঙচুর চালায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।


কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তারা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িত ও উসকানিদাতাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
এরআগে, কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি মানতে সরকারকে ৩০ দিন সময় দিয়ে সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।


রাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনায় ১৮ ছাত্র নেতার একটি কমিটি ছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে ছাত্রনেতা মোকাররম হোসাইন বলেন, আমাদের আট দফা দাবি নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে কাজ করছে। আমরা চাই তাড়াতাড়ি দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা করা হোক। আর যেহেতু দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে, তাই আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে ৩০ দিনের মধ্যে সব দাবি পূরণ না হলে, আবার আন্দোলনে ফিরব।
তিনি আরও বলেন, তৃতীয় পক্ষ এসে আমাদের অহিংস আন্দোলনকে সহিংস করে তুলেছে। আমরা তৃতীয় পক্ষকে কোনো‌ সুযোগ নিতে দিব না। আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার সুযোগ কাউকে নিতে দিব না।


আরেক নেতা তোফায়েল আহমেদ তপু বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনও অগ্নিসংযোগ বা জ্বালাও-পোড়াওয়ে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন হেনস্তার শিকার হতে না হয়। এ সময় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী রেজোয়ান গাজি মহারাজ, সুজন ভৌমিক ও মনিমুল হক উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য করুন