
প্রকাশিত: ২৩ জুন, ২০২৪, ০২:৫০ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
হাকালুকি হাওরপারের বড়লেখা উপজেলায় গত দুই দিন ভারি বৃষ্টিপাত না হলেও কমছে না বন্যার পানি। নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে উজান এলাকা প্লাবিত করছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
এদিকে, ৩৩ আশ্রয় কেন্দ্রে বানভাসি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। পানিবন্দীদের কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন। এতে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। উপজেলা প্রশাসন উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যা দুর্গত এলাকায় ১১ জন সরকারি কর্মকর্তাকে ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন।
শনিবার উপজেলা চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাসনা উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এছাড়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আসলাম সারোয়ার তালিমপুর ইউনিয়নের পানিবন্দী গ্রাম ইসলামপুরের আশ্রয়কেন্দ্র গ্রামের দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণের চাল বিতরণ করেছেন।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বড়লেখার ১০টি ইউনিয়নের সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পৌরসভারও বেশ কিছু এলাকার তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। পুকুর ভেসে বেরিয়ে গেছে মাছ। এই অবস্থায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে ঠিকতে না পেরে অনেকে বাধ্য হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন। কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মানুষজন সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে বন্যার্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরে পানি উঠায় তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঘরে টিকতে না পেরে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন। অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্রের সামনেও পানি রয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে মানুষ গাদাগাদি হয়ে থাকছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চাল ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় কম বলে বন্যার্তরা জানিয়েছেন। তবে নিম্নাঞ্চলের বন্যাকবলিত অনেক মানুষ কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না। ফলে তারা তাদের অসহায়ত্বের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না। এমনকি কেউ তাদের কোনো খোঁজখবরও নিচ্ছে না।
ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কয়েকজন দুর্গত মানুষ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের শুকনো খাবার ও ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। যে খাবার দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পানি থাকায় কোনো ধরনের কাজকর্মও করতে পারছেন না। ফলে অনেকটা বেকার বসে সময় কাটাতে হচ্ছে। অবশ্য কেউ কেউ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহী করছেন।
ইউএনও নাজরাতুন নাঈম জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে, উন্নতি আশা করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আরও কয়েকটি পরিবার উঠেছে। তাদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি চাল, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আসলাম সারোয়ার ও ট্যাগ অফিসারগণের তদারকিতে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। সার্বক্ষণিক পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে
মন্তব্য করুন