মেহেদী হাসান নয়ন, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১০ জুলাই, ২০২৪, ০৫:০২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজের আগমন বেড়েছে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্পকারখানা, সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। এর ফল হিসেবে বন্দর দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি-রপ্তানি। সমুদ্রগামী জাহাজের আগমনও বেড়ে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দরে ৮২৭টি জাহাজ এসেছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৪৬টি জাহাজ এসেছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর জাহাজের সংখ্যা ১৯টি বেড়েছে। এ বছর জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪০টি অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ছয়টি জাহাজ বেশি এসেছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মোট গাড়ি আমদানি হয়েছিল ১৩ হাজার ৫৭৬টি অন্যদিকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৩৪০টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ এ বছরে ১ হাজার ৭৬৪টি গাড়ি বেশি আমদানি হয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং :২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৯.০৫ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০৮.৬৮ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৬ হাজার ৫৮৩ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১ হাজার ৪৪ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৮৪৬টি সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে। এ সময় রিকন্ডিশন গাড়ি, কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। সব সূচক পজিটিভ ধারায় থাকার ফলে বন্দরে নিট মুনাফা ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পদ্মা সেতুর কল্যাণে রাজধানীর সব থেকে কাছের বন্দর হওয়ায় মোংলা হয়ে পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্যও যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপিত হওয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নবদিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। মোংলা বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় বিদেশি ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে এই বন্দর দিয়ে এখন পণ্য আমদানি-রপ্তানি বেড়ে চলেছে।

মোংলা বন্দর দিয়ে যে সব পণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, জিপসাম, মেশিনারি, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার, পামওয়েল ক্রুড ওয়েল, ফ্লাই এ্যাস ইত্যাদি। কনটেইনারে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মোবাইল এক্সেসরিজ, ট্রাইসাইকেল পার্টস, ডাল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পাটজাত পণ্য, খালি গ্যাস সিলিন্ডার, খেলনা, মেশিনার, রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস, মোটরপার্টস, লগ, উডেন লগ ইত্যাদি। এছাড়া রপ্তানিকৃত প্রধান পণ্যসমূহ হচ্ছে গার্মেন্টস, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকানো মাছ, ক্লেটাইলস, কাঁকড়া, মেশিনারি, কটন ইয়ার্ন ইত্যাদি। এছাড়া মোংলা ইপিজেড হতে বিশ্বের প্রায় ৩৮টি দেশে গার্মেন্টস, কাগজের তৈরি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ব্যাগ, পাটজাত পণ্য, গাড়ির সিট, হিটার, মারবেল টাইলস, হিউম্যান হেয়ার, জিপার, সিগারেট, জ্যাকেট এবং নেট ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হয়।

পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধা সৃষ্টি হবে। এতে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১.৫০ কোটি টন কার্গো, ৩.৫০-৪.০০ লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এতে করে বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিপিংএজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মোংলা বন্দরের দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ (পিপিপির মাধ্যমে) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১ লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এতে করে বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মন্তব্য করুন