রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬ মে, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

লংগদুতে খাল খননের মাটি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাট

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা থেকে প্রবাহিত মাইনী নদী মিলেছে রাঙামাটির লংগদু কাচালং নদীর সঙ্গে। ষাটের দশকের আগেকার সময়ে এই মাইনী নদী পাড়ি দিয়ে রাঙামাটির বিভিন্ন হাটবাজারে আসতেন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতা বিক্রেতারা। সেই মাইনী নদীর যৌবন এখন আর
নেই। মৃত প্রায় মাইনী নদীর নৌ-পথ খননের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমুখে বন বিভাগের বিশ্রামাগার এলাকার অংশে এখন চলছে খনন কাজ। তবে নদী খননের বালি দিয়ে করা হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ ভরাট!
বাজার সম্প্রসারণের নামে কাপ্তাই হ্রদের বিস্তৃীর্ণ অংশ ভরাট করছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ একটি চক্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমুখে বন বিভাগের বিশ্রামাগারের পাশের মাইনী নদীতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নদী খননের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আর নদী খননের বালি লোহার পাইপলাইন দিয়ে মাইনীমুখ বাজারের পাশে কাপ্তাই হ্রদে অংশে পাউবো। কাপ্তাই হ্রদ ভরাট করে বালুচর বানানো হচ্ছে। সেজন্য আগে থেকেই কাপ্তাই হ্রদের দুই অংশের মধ্যে মাটি দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। পাউবোর খনন করা নদীর বালি পাইপলাইনে করে ফেলা হচ্ছে বাঁধ দেয়া কাপ্তাই হ্রদে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন বাঁধ দেয়া জায়গাটি আনুমানিক দুই থেকে তিন একর হবে। জলবায়ু পরিবর্তনগত কারণে শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় গত চারমাস ধরে মাইনী নদীর বালি দিয়ে সরকারি সহায়তায় পরিবেশ বিধ্বংসীভাবে হ্রদ ভরাটের এই কাজ চলছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে বালি উত্তোলনের ফলে পুরো বিস্তৃীর্ণ এলাকাটি বালিভূমি হয়ে পড়েছে। তবে অন্যান্য সময়ে শুষ্ক মৌসুমে এই এলাকাটি শুষ্ক মাঠ হয়ে থাকতে। বালি দিয়ে ভরাটের কারণে বাঁধ চুইয়ে বালি ও পানির কারণে বাঁধের বাহিরে কাপ্তাই হ্রদের অংশটিও চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কমেছে কাপ্তাই হ্রদে মাছ চাষাবাদের ভূমিও। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদে পানি ভর্তি মৌসুমে বাজার এলাকায় নৌ-যানের জন্য কয়েকটি নৌ-ঘাটও রয়েছে। হ্রদ ভরাটের কারণে নৌ-ঘাটগুলো কেবল স্মৃতির নিদর্শন হয়ে থাকবে যে এখানে এক সময়ে নৌ-যান ভিড়তো। নদীর বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাট করে ভরাটকৃত জায়গাটিতে মাইনীমুখ বাজার সম্প্রসারণ করা হবে। পুরো এই পরিবেশবিধ্বংসী কাজটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল। বাজার সম্প্রসারণের জন্য বলা হলেও মূলত স্থানীয় ভূমিদস্যু একটি চক্র হ্রদ ভরাট করে প্লট বিক্রয় করবে। হ্রদ ভরাটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে শুরু করে সাংবাদিকদেরও ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


অভিযোগ রয়েছে, লংগদুর মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল পুরো হ্রদ ভরাট কাজের নেতৃত্ব দিলেও তার পেছনে পরোক্ষভাবে রয়েছেন লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এই প্রভাবশালী নেতার একচ্ছত্র প্রভাব আর নিয়ন্ত্রক রয়েছে। তবে নদী খননের মাটি দিয়ে হ্রদ ভরাটের অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন এই নেতা।

স্থানীয়রা বলছেন, মাইনীমুখ বাজারের পাশে বাজার সম্প্রসারণ নাম করে হ্রদ ভরাটের শুরুর পর ঘটনাস্থলেও যায় উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ বা সতর্ক করেনি উপজেলা প্রশাসন। উল্টো দৃশ্যত দেখা গেছে কাপ্তাই হ্রদের নির্দিষ্ট অংশে লাল
পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে স্থানীয়রা লাল পতাকার অংশের ভেতরের জায়গা বেদখল কিংবা ব্যবহার করতে না পারেন। স্থানীয়রা প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে হ্রদ দখলে উৎসাহ যুগিয়েছে বলছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, খোদ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল মাটি ভরাটের কাজে সম্পৃক্ত থাকায় এবং এই ঘটনার পেছনে আরও বড় চক্র থাকায় প্রতিবাদ জানাতে সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কোন কারণে নিশ্চুপ রয়েছে। মাইনীমুখ বাজারের পাশেই জনবহুল একটি এলাকায় এমন পরিবেশ-প্রকৃতি বিধ্বংসী কাজ চলছে প্রশাসন কী দেখছে না।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, প্রতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে এলে হ্রদ ভরাটের মহোৎসব দেখা হয়। ক্রমাগত হ্রদের অংশ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে দখলদার ও ভূমি দস্যুরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা কাপ্তাই হ্রদের অবৈধ বেদখল ঠেকাতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপের গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।

মাইনীমুখ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘কলাবাজার, গরু বাজার, কাঠ বাজারের কারণে মাইনীমুখ বাজারের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। মৌখিকভাবে চেয়ারম্যান (মাইনীমুখ ইউপি) আমার সঙ্গে সমন্বয় করছেন যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাটি
যদি এখানে ফেলা হয় সেক্ষেত্রে বাজারটা সম্প্রসারণ করা যাবে। যে কোনো সময় অবৈধ দখলকদার পেছনে দিকে যাচ্ছে; সেটি ঠেকাতে এসি ল্যান্ড মহোদয় সার্ভেয়ার দিয়ে ম্যাপ করেছেন। এরপর সেখানে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। মাটি ভরাটের পর জায়গাটি জেলা
প্রশাসক মহোদয়ও নিতে পারেন কিংবা বাজার সম্প্রসারণের জন্যও দিতে পারেন। ’নদীর মাটি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাট কাজের মূলহোতা লংগদুর মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমল বলেন, ‘মাইনীমুখ বাজারটি অত্র এলাকার মধ্যে একটা বড় বাজার। কিন্তু হাঁটবারে বাজার বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই বাজারটি সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ হয়েছে। মাইনীনদী যখন খনন করা হচ্ছে তখন আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি নদী খননের মাটিগুলো যদি এখানে ভরাটের জন্য ফেলা হয় তাতে আমাদের সুবিধা হয়। তাই জায়গা ভরাটের জন্য এখানে মাটি ফেলা হচ্ছে। এটার সঙ্গে অনেকেই জড়িত আছেন। হ্রদ ভরাটের অনুমতির বিষয়টি আমার জানা নেই। সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জিজ্ঞেস
করেন। এখানে একটা গ্রুপ ভাগবন্টনের জন্য চাইছে, কিন্তু ভাগবন্টন করতে পারতেছে না। সেজন্য কাপ্তাই হ্রদ, মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে এসব কথা বলছে। একটা গ্রুপের এটা মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াইছে।’

লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, ‘আমার কথা কেন আসছে বিষয়টি আমি জানি না। লংগদুর মাইনীমুখ বাজারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হওয়ায় হাটের দিন ফরেস্ট রেস্ট হাউজের জায়গাতেও বাজার বসে। বাজারটা সম্প্রসারণ আসলে
খুবই প্রয়োজন জনগণের স্বার্থে। আর যেখানে ভরাট হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ ও মাইনীমুখ মডেল হাইস্কুলের এক একর জায়গা রয়েছে। জায়গা ভরাট হলে স্কুলের বাচ্চারাও খেলাধুলা করতে পারবে। এসব কারণেই বাজারহাট সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাজার তো জেলা
পরিষদের এখানে আমার কিংবা কমলেরও (ইউপি চেয়ারম্যান) ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। জনগণের স্বার্থেই সব করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের মাটিগুলো তো কোথাও না কোথাও ফেলতে হবে, তাই এখানে ফেলা হচ্ছে। যাতে করে মাঠটা সম্প্রসারণ করা যায় এবং
মাটিগুলো ফেলে ভরাট করা যায়।’

তবে এসব জানতে চাইলে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড লাল পতাকা দিয়ে লে-আউট দিয়েছে যাতে করে স্থানীয়রা কাপ্তাই হ্রদের খাস জায়গা ব্যবহার ও চাষাবাদ না করে। লে-আউটের বাহিরের জায়গা কেন
ভরাট করা হচ্ছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড ভালো জানতে পারবে। তবে আমি যতদূর জানি সেখানে মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ ও বিদ্যালয়ের মাঠের জায়গা রয়েছে। ইউপি পরিষদের স্থায়ী ভবন ও বিদ্যালয়ের মাঠ সম্প্রসারণের জন্য জায়গা ভরাট করতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খাগড়াছড়ির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন,‘আমার প্রকল্পের স্টাডিতেই উল্লেখ আছে ড্রেজিং করা মাটি-বালি যদি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্কুলের জন্য চাহিদা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের দান করে দিতে পারবো। এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে ট্রাক কিংবা পরিবহনের খরচ তারা দেবেন। মাইনীমুখ ইউপির চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের চাহিদার ভিত্তিতে তাদের বালিগুলো দেওয়া হচ্ছে।’

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘নদীর নৌ-পথ খননের মাটি দিয়ে ভরাট করে যদি নৌ-ঘাট বন্ধ হয়ে যায় হ্রদ ভরাট করা হয়; তাহলে এটি তো পরিবেশবিধ্বংসী কাজ এবং বড় ধরণের অপরাধ। স্থানীয় প্রশাসন লাল পতাকা দেওয়ার পরও যদি সেখানে কাপ্তাই হ্রদের জলাধার ভরাট হয়ে থাকে তাহলে তারা প্রশাসনকে মানছে না, আর নয় কোনো ঘটনা তো রয়েছেই। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাব এ ধরণের পরিবেশবিধ্বংসী অপতৎপরতা ঠেকাতে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়।’

কাপ্তাই হ্রদে মাছ চাষের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া জানান, ‘কাপ্তাই হ্রদের মৌলিকত্ব রক্ষায় আমাদের যা করণীয় আমরা সবই করব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির আট ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে বিস্তীর্ণ কাপ্তাই হ্রদে পানির রুলকার্ড অনুযায়ী ১২০ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পর্যন্ত যে কোনো ধরণের অবকাঠামো নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে হাইকোর্টের দেয়া
এক আদেশে কাপ্তাই হ্রদে অবৈধ বেদখল ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ হয়েছে।

রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন,‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো পর্যন্ত অভিযোগ আসেনি। আমি এ বিষয়ে অবগত নই। ইউএনও’র মাধ্যমে সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের (রাঙামাটির অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম বলেন, ‘লংগদুর মাইনীমুখে নদী খননের বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাটের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। আমি ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি। হ্রদ ভরাটের ঘটনায়
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, বাজার সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বাজার চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতাদের নাম প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। ঘটনার বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, মাইনীমূখ বাজার সংলগ্ন নদী খননের বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভরাটের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো যেখানে খনন করতে হবে সেখানে না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট
জায়গায় তারা নদী খনন করছে। এই খনন যদি নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও নৌ মন্ত্রনালয় মিলে স্থানীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সাথে পরামর্শ করে করা হতো তাহলে তারা সমালোচনার পাত্র হতো না।

মন্তব্য করুন