ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১ জুন, ২০২৪, ০৯:১৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

লটকন চাষে প্রশংসায় ভাসছেন শাহিন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পাহাড়ে এক সময়ের জংলি ফল নামে বেশ পরিচিত ছিল লটকন। পাহাড়ের ঢালু আর বনে-জঙ্গলে জন্ম নেওয়া গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে থাকতো এ লটকন ফল। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে ও উঁচু নিচু ছায়াতলে দিন দিন ব্যাপকহারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি এ ফলটির। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাহাড়ি বাজার ছাড়িয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

উচ্চ ফলনশীল এই কৃষিপণ্য গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালের থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায়। এ ফল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ টক-মিষ্টি লটকন ছোট-বড় সবার কাছেই অনেক প্রিয়। পাহাড়ে আম-লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলেও পিছিয়ে আছে লটকন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাংলাদেশ ভারত সিমান্তবর্তী ঘেষা বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে বানিজ্যিকভাবে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা আর ছোট পাহাড়ের ঢালুতে গাছে গাছে ঝুলছে লটকনের সবুজ ও সোনালি রঙের থোকা।

বিজয়নগর উপজেলার চানপুর এলাকার বিজয়নগর এগ্রো ফার্মের একটি আংশ ছোট পাহাড়ের ঢালে বানিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. শাহিন। তার সৃজিত মিশ্র ফলজ বাগানের চারপাশে ২০১৯ সালে প্রায় ৪০০ টি লটকন গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি।যা থেকে গত দু’বছর যাবৎ পুরো দমে  ফল সংগ্রহ করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালায় ঝুলে আছে অসংখ্য লটকনের তোরা। গেলো বছরের তুলনায় এছর দ্বিগুণ ফলন এসেছে বাগানে। স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন টক-মিষ্টি ফল লটকন প্রতি কেজি বর্তমান বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প পরিশ্রম আর কম পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন উপজেলার অনেকেই।

উঁচু নিচু জমির মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী জানিয়ে লটকন চাষি মো. শাহিন বলেন, জমির মালিক এডভোকেট তারেক আহমেদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় লিচু আম কাঠাল এর পাশাপাশি লটকন চাশের উদ্যোগ নেয়। প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ৪০০ শ টি লটকন ছারা রোপন করি। গত ২ বছর থেকে সবকটি গাছেই ফলন আসছে বেশ। গেলো বছরের তুলনায় এবছর অধিক ফলন এসেছে। লটকন চাষে তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কম পুঁজি ও কম পরিচর্যায় ভালো ফলন পাওয়া যায়। কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে বাজারজাত। একেকটি গাছে লটকন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি লটকন হবে বলে আশা করছি। এ বছর লটকন একজন পাইকারের কাছে বিক্রি করেছি বাগানে লটকন ফুলা আসার সময়। বর্তমান বাগানটি মো: শামিম দেখাশোনা করছেন। 

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহিন ফলনশীল গাছপালা নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছে। উপজেলার অনেক মানুষ শাহিনের কাছ থেকে ফল বাগানের পরামর্শ নিয়ে থাকেন।  শাহিনের ফলজ বাগান দেখতে দূর দুরান্ত  থেকে অনেক পর্যটক ও আসেন। 

এদিকে বর্তমান লটকন বাগান পরিচর্যাকারি শামিম বলেন, ১ লাখ টাকা খরচে প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব। লটকন বাম্পার ফলন হয়েছে বাজারেও অনেক চাহিদা রয়েছে। 

কৃষি কর্মকর্তা মো আশরাফুল ইসলাম জানান, বিজয়নগর  এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বাজারের চাহিদাও বেশি। উচ্চ ফলনশীল এই ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আরও আগ্রহী করা প্রয়োজন।’

তিনি আরো জানান উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে ১৫ হেক্টর টিলা ভূমিতে লটকট চাষ হয়েছে। লটকনের ফলনও ভালো হয়েছে। বেশি পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লটকন চাষ করে সফলতা লাভ করেছেন অনেকেই।’ 

মন্তব্য করুন