নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবার, ২০২৪, ১০:২১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

শুল্ক কমিয়ে বাজারে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা

নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনমনে তৈরি হওয়া ক্ষোভ প্রশমনে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। এর অংশ হিসেবে এবার কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজারে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কয়েক দিন ধরে ডিমের বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ডিমের ডজন দুশোর ঘর ছুঁইছুঁই। এই অবস্থায় নিত্যপণ্যটি পাশের দেশ ভারত থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের বাজারে এসে সেই ডিমের দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে এজন্য পণ্যটির আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় পণ্যটির দাম স্বাভাবিক রাখতে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে চিনি আমদানিতে শুল্ক অর্ধেক করেছে সরকার।

দুই মাসের কিছু সময় বেশি বয়সী এই সরকার এখন সবচেয়ে সংকটে রয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সর্বাত্মক জোর দিচ্ছে। যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চায় সরকার। এজন্য দরকারি কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি কেউ যেন কারসাজি করে বাজার অস্থির করে না তুলতে পারে সেই নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ডিমের আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান ডিমের নতুন দাম নির্ধারণের কথা জানান। তিনি জানান, বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা, খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা খরচ হবে বলে জানানো হয়।

দুপুরে বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে ভোজ্য তেলের আমদানিতে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। শুল্ক অব্যাহতির ফলে ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান মূল্য বহাল থাকবে বলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে। এর আগে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মূল্য সমন্বয়ের আবেদন করে।
গত ৯ অক্টোবর চিনির বাজার দর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ডিম, ভোজ্য তেল ও চিনিতে শুল্ক কমানোর ফলে এই তিনটি নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তবে কোনো গোষ্ঠী কারসাজি করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াতে চাইলে তাদের ঠেকানোর বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে সরকারি উদ্যোগে সুলভমূল্যে ভোক্তাকে ১০টি কৃষিপণ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাজধানীর খাদ্য ভবনের সামনে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করে বলেছেন, এর মাধ্যমে জনসাধারণ উপকৃত হবে।
এই কর্মসূচির আওতায় জনপ্রতি এক কেজি আলু ৩০ টাকা, এক ডজন ডিম ১৩০ টাকা, এক কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, এক কেজি কাঁচা পেঁপে ২০ টাকায় এবং পাঁচ কেজি বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক-সবজি প্যাকেজ আকারে বিক্রি করা হবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ২০টি স্থানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে এসব কৃষিপণ্য দেওয়া হবে। স্থানগুলো হলো- খাদ্য ভবন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুর-১০, বাসাবো, বসিলা, রায়ের বাজার, রাজারবাগ, মুগদা-উত্তর, মুগদা-দক্ষিণ, পলাশি মোড়, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, বেগুনবাড়ী, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, কামরাঙ্গীরচর, রামপুরা ও ঝিগাতলা।

মন্তব্য করুন