
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই, ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাজারে বর্ষাকালীন সবজি পর্যাপ্ত থাকলেও দাম চড়া। কিছুতেই কমছে না সবজির দাম। সবজি কিনতে হিমসিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। মাছ, মাংস খাওয়া যেখানে স্বপ্নের মতো সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ দুমুটো ডাল ভাত খেয়ে জীবনযাপন করতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সবজির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, তেল আটার দাম দিন গেলেই বেড়ে চলেছে।
ফলে সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ বাজারে যেয়ে বাকরুদ্ধ হচ্ছে পণ্যর দাম শুনে। সাতক্ষীরার সকল বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্দ্ধমুখী। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির অজুহাতে আবারও বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে। এছাড়া বেড়েছে অন্য সবজির দামও। তবে, কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মুরগির বাজারে। মুরগির দাম কেজি প্রতি কমেছে আরও ২০ টাকা। শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সুলতানপুর কাঁচাবাজারে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৯০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৬৫ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, বরবটি ১৩০-১৪০ টাকা, টমেটো ১৫০-১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা এবং শসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, সোনালি ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ-মাংসের দাম। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ছাগলের মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আকারভেদে রুই ২৬০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকা, কাতলা ৩২০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকা, মৃগেল ২০০-২৫০ টাকা, আকার ভেদে পাঙ্গাস ১৮০-২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, টেংরা ৩৭০ থেকে ৫০০ টাকা, কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদিপণ্যের মধ্যে খোলা চিনি ১৪০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৪৭ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা। তবে বাড়েনি চাল, আটা-ময়দার দাম। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে জাত ভেদে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।
বড় বাজারে পণ্য কিনতে আসা মাহবুবার রহমান বলেন, বাজারে গেলে বোঝা যায় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি কেমন মাত্রা যোগ হয়েছে। ১হাজার টাকার নোটে ৩/৪ আইটেম পণ্য নিলে ফুরিয়ে যায়। মানুষের জীবনযাপনে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে যারা দিনমজুর নিম্ন আয়ের মানুষ তারা অনেক কষ্ট জীবনযাপন করছে। সিন্ডিকেটের কারণে মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। জবাবদিহিতা করার কেউ নেই। জনপ্রতিনিধিরা ও মানুষের দুংখ কষ্ট নিয়ে ভাবেন না। প্রশাসন তেমন মনিটারিং করেনা।
আরেকজন ক্রেতা দিনমুজুর রবিউল ইসলাম বলেন, গরীর মানুষের সবচেয়ে বড় জ্বালা। যা ইনকাম করি ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। মাছ সপ্তাহে ও মাংস তো মাসে ১দিন কিনতে হিমসিম খাই। ঘরে ছোট দুই ছেলে তারা ও নিয়মিত ডাল, মাছ বিহীন খাবার খেতে চায় না। গরীবের যত জ্বালা দেখার কেউ নেই।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সভাপতি আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতিতে মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আয় অনুযায়ী ব্যয় বেড়েছে। বারবার সিন্ডিকেট দ্বারা দ্রব্যমূল্য দাম বৃদ্ধি করানো কথা বললে ও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। প্রশাসনের হীনমন্যতা কারণে সিন্ডিকেট সক্রিয়। সঠিকভাবে বাজার মনিটারিং করলে সিন্ডিকেট ভেঙে ক্রেতারা নায্যমূল্য পণ্য ক্রয় কয় করতে পারবে। বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে বাজা মনিটরিং করতে হবে প্রতিদিন। টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে টিসিবির আওতায় আনতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হাসান জানান, শাক-সবজির বাজার নিয়ন্ত্রন করে মধ্যস্বত্তভোগীরা। বর্ষায় খেত নস্টের অযুহাত দেখিয়ে অনেক বাজারে অতিরিক্ত দাম নেয়া হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার নিয়ন্ত্রনে নিয়মিত অভিযান করছে।
সাতক্ষীর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা শোয়াইব আহমেদ জানান, বাজারে নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচলনা করা হবে।
মন্তব্য করুন