
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই, ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সুনামগন্জের মধ্যনগর উপজেলা হাওর বেষ্টিত অঞ্চল। দিঘা, গোড়াডুবা, বোয়ালা, টগা, শনি এবং টাঙ্গুয়ার কিছু অংশ ঘেরা মধ্যনগর উপজেলা। বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর হাওর গুলো পানিতে টইটুম্বুর থাকে। এসময় অনেক অতিথি পাখির আগমন ঘটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হয়ে উঠে চির যৌবনা। যেন বহিদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেও হার মানায়। কিন্তু ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক সময় হাওরের রুপ বদলে জনমানুষের গৃহস্থালিসহ চলাচল ও জীবনযাত্রার অতীব দুঃখের কারণ হয়ে উঠে। এই হাওর গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৩০ রকমের দেশীয় মাছ পাওয়া যায়।আমরা জন্মগত ভাবে মাছে ভাতে বাঙালি। হাওর পাড়ের মানুষগুলো জীবনযাত্রার সহচর হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে বর্তমানে ইজারাদারদের জলমহল এর অবৈধ দখল এর কারনে সাধারণ মানুষ দেশীয় মাছ থেকে ধরা এবং বাজার থেকে ক্রয় করা থেকে বঞ্চিত। প্রতিটি হাওরে পরিমাপ অনুযায়ী ইজারাভুক্ত বিল রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি হাওরে সাধারণ মানুষের অনেক পরিমাণ ফসলি জমি রয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে যখন পানিতে হাওর ভরে যায় তখন ইজারাদারদের অধিভুক্ত বিলের পরিধি সাধারণ মানুষের ঘরের দূয়ার পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ফলে মধ্যনগর উপজেলার সাধারণ জনগণ দেশীয় মাছ ধরতে গেলে বিভিন্ন লাঞ্ছনা ও হামলা/মামলার শিকার হন।
বিষয়টি বর্তমান সংসদ এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার এর নজরে আসলে, তিনি মধ্যনগর উপজেলার সকল ইজারাদারদের উদেশ্য বলেন, আপনারা যারা ইজারাদার আছেন আপনারা আপনাদের সরকারি বিধি মোতাবেক অধিভুক্ত বিলের বাহিরে ভোগদখল মুক্ত করার নির্দেশ দেন। মাননীয় সংসদ বলেন আমরা মাছেভাতে বাঙালি। আমাদের অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিকের দেশীয় মাছ ধরার অধিকার আছে। অতএব ইজারা ভুক্তের বাহিরে সাধারণ জনগণ মাছ ধরবে এবং খাবে। তিনি এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
নোয়াগ্রামের শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বি বাবু ধানেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ছোট কাল থেকে আমরা সবসময় মাছ ধরে আসছি । কিন্তু এখন ইজারাদারদের দখলে সবকিছু থাকায় বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে বাজার থেকে পুকুরে চাষকৃত মাছ ক্রয় করে সমাদর করতে হয় । তিনি বলেন বর্তমানে বিষয়টি এমপি মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সাধারন মানুষ লাভবান হবে।
চামারদানি গ্রামের কৃতিসন্তান মেজর সোলায়মান তালুকদার অবঃ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) বলেন, আমাদের কৃষক সহ সাধারন মানুষেরা ইজারাদারদের কাছে জিম্মি।কৃষক সহ সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ে আমি নিরলসভাবে কাজ করতে চাই। তিনি আরও বলেন বর্তমান সংসদ এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেছেন। আমি আমার উপজেলায় প্রত্যেকটি কাজ তদারকি করবো এবং সাধারণ মানুষের নাগরিক সুবিধা অর্জনে বর্তমান সাংসদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। আমরা মধ্যনগরবাসী সবসময়। অবহেলিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত। শোষণ শাসনের ভিড়ে আমাদের এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত।আমি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেছি। আমি আমার অবসর পরবর্তী জীবন মানুষের কল্যাণে নিবেদিত করিবো। সমস্ত অনায্যতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগনের সাথে আছি এবং থাকবো।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, আমাদের উপজেলায় মৎস কর্মকর্তা নেই। জলমহলে বিভিন্ন ধরনের চায়না জাল, কারেন্ট জাল ব্যাবহারে ছোট ছোট মাছ ধরে মাছের প্রজনন নষ্ট করা হচ্ছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাছের প্রজনন নষ্ট, কারেন্ট জাল ও চায়না জাল ব্যাবহার এর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তিনি ইজারাদার এবং সাধারন নাগরিকদের ছোট পোনামাছ ও ডিম ওয়ালা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন।
মন্তব্য করুন