পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২ মে, ২০২৪, ০৮:০৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ইসি রাশেদা সুলতানা

‘আর এক পা নড়বেন না, এক চুল করবেন না’

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রভাবশালীরা ক্ষমতা লালন করেন, ধারণ করেন। অন্যের উপর প্রয়োগ করেন। তাদের জন্য হুশিয়ারি দিয়ে বলছি- এতদিন যা করেছেন করেছেন; আর এক পা নড়বেন না, এক চুল করবেন না। আপনারা অনিয়ম করবেন আমরা ছাড়ব না। কমিশন এত দুর্বল নয় যে, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব। নির্বাচনে কোনরকম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি এমপি মন্ত্রী যেই হোন। বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন নিয়ে পাবনা জেলার সকল উপজেলার প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা।

পাবনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত মতবনিমিয় সভায় পাবনা জেলার নয়টি উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, মন্ত্রী এমপিরদের নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। তবে, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেনো নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা না করেন। এর ব্যত্যয় হলে, কমিশন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সে
সক্ষমতাও কমিশনের রয়েছে। তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা কারো আশীর্বদের দৃষ্টিতে আাছেন তারা সরে আসেন। আপানকে যে আশীর্বাদ দিচ্ছেন নিশ্চয়ই আপনি তার সুবিধাভোগী। অনিয়ম পেলে প্রার্থিতা বাতিল করে দিব। এমন সময় করে দিব যখন আদালতেও
যাওয়ারও সময় পাবেন না। আমাদের এত পরিশ্রম কেউ পন্ড করে দিবেন, তা হবে না।

স্থানীয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ আচরণের নির্দেশনা দিয়ে ইসি বলেন, পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রমাণ মেলে সরকারি কর্মকর্তাদেরও চাকুরিচ্যুত করা হবে। আইনগত ব্যবস্থা নেবে কমিশন। যদি কোন কর্মকর্তার কারো প্রতি অনুরাগ প্রদর্শনের মনোবৃত্তি থাকে, তবে তারা যেনো তা পরিহার করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জিরো টলারেন্স দেখাবে।

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে। অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমান আদালতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশৃংখলার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সাধারণ মানুষের কাছে হেনস্তা করবে, নির্বাচনকে কলুষিত করবে, দেশের ভাবমূর্তি যে নষ্ট করে তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের কোনো কাজে বাধা দেওয়া যাবে না। দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

ইসি রাশেদা আরও বলেন, দেশের নিদারুণ বাস্তবতা হলো ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পর্ক ভালো নেই। তাই ভোটার ছাড়া ভোট হয়ে যাবে ওইদিন চলে গেছে। প্রার্থী যারা আছেন তারা ভোটারদের কাছে যান, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করেন। তাদের কাছে টেনে নেন। তাদের ভোটেই আপনাকে নির্বাচিত হতে হবে। নির্বাচনি আইন মেনে প্রচারণা করেন। নির্বাচন কমিশন যেকোনো মূল্যে ভালো ভোট করবে।

সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল ওহাব বলেন, সুজানগর পৌরসভার বর্তমান মেয়র একটি সভায় বলেছেন, ‘‘ভোট দিতে হবে, না হলে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হবে। তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আমার নির্বাচনী অফিসে হামলা হয়েছে। মোবাইলে
ভোটারদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব অভিযোগ তথ্য প্রমাণসহ লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চাটমোহর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করা হচ্ছে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দুলাল মির্জা এমপির লোক, এমপির প্রার্থী। আপনি ভোট পাবেন কীভাবে। ভোট তো ওরা সব নিয়ে নেবে। প্রার্থীকে এমপির লোক বলে প্রচারণা চালানো বন্ধের দাবি জানান তিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, দুজন শিক্ষককে বিশেষ লোকের নাম বলে দুটি মোটরসাইকেল পাঠিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে একজন প্রার্থীর সভায় যেতে বাধ্য করা হয়েছে। নির্বাচন শুরুর আগেই তো প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তার চলছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। ইভিএম কক্ষে যেন প্রভাবশালী মহল কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করতে না পারে সে বিষয়টিও কঠোরভাবে দেখার দাবি জানান ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সরকার।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেছবাহুর রহমান রোজ বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে বা কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে শুধু আমরা অভিযোগ দেব, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা নির্বাচন কমিশনের লোকজনের কী কোনো দায়িত্ব নেই? বিভিন্ন প্রার্থীদের মোটর সাইকেল মহরা ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভীতিকর প্রচারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসি কমিশনার বলেন, এখন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় কেউ প্রদর্শন ও আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিশৃংখলা বাদ দিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করলেই লাভবান হবেন।

রাজশাহী বিভাগীয় স্থানীয় সরকারের পরিচালক পারভেজ রায়হানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবির সিইও গোলাম কিবরিয়া, জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান ও
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী।

 

মন্তব্য করুন