
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ, ২০২৪, ০৭:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
একসময় গ্রামগঞ্জের এমন কোনো বাড়ি ছিল না, যে বাড়িতে পুকুর আর ডোবা ছিল না। সেসব ডোবা আর পুকুরে সারাবছর পানিতে টইটম্বুর থাকত। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানিও থাকত সেখানে, যা দিয়ে খাবারের চাহিদার পাশাপাশি গৃহস্থালির কাজ মিটত অনায়াসে। সময়ের পরিবর্তনে এখন এসব পুকুর আর ডোবা চোখে পড়ে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। পুরো উপকূলজুড়ে বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পোহাচ্ছেন উপকূলবাসী। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে রোগবালাইয়ের আধিক্যতা দেখা দিয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বিভিন্ন গ্রামঘুরে দেখা গেছে, অনেক পরিবারেই পুকুর নেই। যাদের একসময় বড় পুকুর ছিল, তারা তা ভরাট করে বসতি স্থাপন শুরু করেছে। বর্ষা মৌসুমে পুকুর আর ডোবায় পানি থাকলেও, খরা মৌসুমে তা একেবারে পানি শূন্য হয়ে পড়ে। অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতে হয়। যে পরিবারে পুকুর আছে তাও দূষিত হয়ে আছে। উপায়ান্তর না পেয়ে দূষিত পানিই গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করছে। যার ফলে উপকূলে প্রায় পরিবারে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। খালবিলে পানি থাকায় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। ফলে পারিবারে আমিষের চাহিদা মিটত। পাশাপাশি বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতো পরিবার। এখন সেসব স্থান পানিশূন্য থাকায়- না আছে দেশীয় মাছ, না পারছে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে। কয়েক বছর আগেও গভীর নলকূপে ৬০০ থেকে ৭০০ ফুট গভীরেও পাওয়া যেত বিশুদ্ধ পানি। আজ ১১০০ থেকে ১২০০ ফুট গভীরে গিয়েও মিলছে না বিশুদ্ধ পানি। পানির স্তর
নিচে নেমে গেছে। কোনো জায়গায় মিলছে লবণ পানি। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে উপকূলবাসীর। এতে কষ্টের মুখোমুখি উপকূলের মানুষ। সহজেই পানি পাচ্ছেন না তারা। এতে পানির দেশেই পানির আকাল। তথ্য বলছে, পাঁচ বছর আগেও একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করতে খরচ পড়ত ৩০ হাজার টাকা। সেই নলকূপ এখন স্থাপন করতে ব্যয় হয় ৮০ হাজার টাকা। একদিকে পানির সংকট অন্যদিকে বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নলকূপ স্থাপন করতে বড় কষ্ট হচ্ছে উপকূলবাসীর। না আছে বিশুদ্ধ পানি, না আছে অর্থ। সব মিলিয়ে যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিশুদ্ধ পানির সহজলভ্যতা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যম উপকূলের প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা।
পাশাপাশি যতগুলো খাল দখল হয়েছে তা উদ্ধার করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক-এমনটাই এখন উপকূলবাসীর দাবি। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুরের বাসিন্দা মো. অহিদুজ্জামান ইয়াকুব বলেন, আমাদের এলাকার বহু খাল দখল হয়ে গেছে। পুকুর আর জলাশয় ভরাট করে
বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে আমরা দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা যেন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে পারি এবং দখল হওয়া খাল আবার খনন করলে আমরা তা কাজে লাগাতে পারতাম।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রুরাল ইনহ্যান্সমেন্ট অরগানাইজেশনের (রিও) নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, খালবিল থেকে পানি সংগ্রহ করে সেচ দিত এখানকার কৃষকরা। ফলে ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারত। কিন্তু এখন খালবিল দখল হয়ে গেছে। যাও আছে তাতে পানি নেই। এতে মৌসুম ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের উচিত এ দিকে নজর দেওয়া।
সিনিয়র সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী মো. মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, বিগত ২০ বছরে কলাপাড়া উপজেলায় ভরাট হয়েছে প্রায় ২০০টি পুকুর ও জলাশয়। এসব পুকুর আর জলাশয় গড়ে উঠছে বড় বড় ইমারত। তিন ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে প্রায় ২০ হাজার
একর। খাল দখল হয়েছে প্রায় ১ হাজার। দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হলে আবার মানুষ সুফল পাওয়া শুরু করবে।
পটুয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, খালবিল ভরে যাওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কোথাও আগুনের সূত্রপাত হলে বিল জলাশয় থেকে পানি নিয়ে নির্বাপণ কাজে লাগানো যায়। সর্বোপরি কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে।
মন্তব্য করুন