
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ, ২০২৪, ০৭:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ীর পাংশায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনী নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার অভিযোগে এক প্রভাষককে শোকজ করা হয়েছে।
গতকাল ২৭ মার্চ পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে কারণ দর্শানো হয়।
অভিযুক্ত প্রভাষকের নাম শামীমা আক্তার মিনু। তিনি পাংশা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক।
তার ফেসবুক পোষ্ট হুবহু তুলে ধরা হলঃ-
আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস পালন😭
আমাদের কতটা অধঃপতন হয়েছে কষ্ট করে একটু ভাবুন । এই দিনকে কেন্দ্র করে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা প্রায় ১মাস ধরে অনুশীলন করে কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও অন্যান্য প্রতিযোগিতার জন্য। তারপর অনেক উৎসাহ আনন্দ নিয়ে রোদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আর এদিকে বিচারক মন্ডলী সুন্দরভাবে সেজেগুজে এসে আরামে বসে গল্পে মেতে থাকে। তারা ভালোভাবে সময় নিয়ে দেখেই না। আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখে কাদেরকে পুরস্কৃত করবে।এত কষ্ট করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সামান্য কয়েক টাকার একটা পুরস্কার নিয়ে যাওয়ার আশায় শিক্ষার্থীদের এত আনন্দ উল্লাস।কিন্তু খুবই কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এগুলো পায়। বাকি প্রতিষ্ঠান চলে যায় খালি হাতে। বাকি পুরস্কার বরাদ্দ থাকে লোক দেখানো বিচারকদের জন্য, সাংবাদিক নামের কিছু মানুষের জন্য, সুধী সমাজের জন্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য। এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালন। সব জায়গাতেই স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, মাইকের সামনে বড় বড় বুলি, শুধু লোক দেখানো,দায়সারা। দেশত্ববোধ থেকে কিছুই করছি না। আমরা বাচ্চাদের কি শেখাবো 😭হায়রে আমার স্বাধীনতা 🙏
(লেখাটি প্রকৃত দেশপ্রেমিকের জন্য প্রযোজ্য নয়)
কারণ দর্শানো নোটিশ সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ ২০২৪ খ্রি. তারিখে পাংশা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এ সরকারি অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রি. তারিখ সকাল আনুমানিক সকাল ৮ টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শামীমা মিনু নামে তার নিজ ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষোদগার করেন এবং অনুষ্ঠানের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রতিযোগিতার বিচার কার্যক্রম ও পুরস্কার প্রদানকে প্রশ্নবিদ্ধ দাবী করে অযৌক্তিকভাবে উপজেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন করেন।
প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু তার পোস্টের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কেন সুপারিশ করা হবে না আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী বরাবর লিখিত ভাবে দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী জানান, প্রভাষক শামীমা মিনু তার ফেসবুক আইডিতে যা লিখেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করেছে। যা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯' এর অনুচ্ছেদ ১০ এর উপানুচ্ছেদ (৪), (ছ) এবং (বা) অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের জন্য পরিহারযোগ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ক্যাপ্টেন মোঃ ইয়ামিন আলী জানান, ফেসবুকে পোস্ট করার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। পোস্টটি কড়ায় কলেজের ইমেজ এ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ বিষয়ে তিনিও ২৮ মার্চ একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে। আগামী ১০-কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব চাওয়া হয়েছে।
কারণ দর্শানোর বিষয়ে অভিযুক্ত প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু জানান, আমি নোটিসটি দেখে অবাক হয়েছি কি কারনে এটা দেওয়া হল। আমার ছাত্র ছাত্রীরা খুবই আনন্দ উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমার খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে যারা বিচারক মন্ডলী ছিলেন তারা হাসি ঠাট্টা একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেন না বিষয়টা। এবং ডিসপ্লে টা শেষ না হতেই তারা বন্ধ করে দিলেন। পরে ছাত্র-ছাত্রীরা এসে আমার কাছে কান্না শুরু করে দিয়েছে।
তারা বললেন, আমরা এত কষ্ট করে ডিসপ্লে টা করলাম তারা একটু দেখলেন না। শেষ না হতেই বন্ধ করে দিয়েছে। তখন আমার খুব কষ্ট লাগলো ওরা এত কষ্ট করে আনন্দ উল্লাসে দেশটাকে তুলে ধরেছে সেটা আমাদের দেখার আগ্রহ নেই। আর সেই কষ্ট থেকেই আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। সেই পোস্ট কোনভাবেই দেশ বিরোধী হয় কিনা সেটা আমার জানা নেই।
এই লেখাতে যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষক হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইছি । তিনি আরো বলেন, আমি সরকারি কলেজের প্রভাষক আমাকে কি ইউএনও কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে পারেন কিনা সেটাও আমার জানা নেই।
মন্তব্য করুন