
প্রকাশিত: ১৩ মে, ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কোন বাধাঁই যেন সিয়ামের অর্জন রুখতে পারেনি। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে অদম্য মোঃ সিয়াম শেখ। অর্জন করেছে জিপিএ ৩.৮৩। অভাব, দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে দৃড় ইচ্ছা আর মনোবল নিয়েই এগুতে চায় সিয়াম। তার মনে নেই কোনো হতাশা।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন সিয়াম। তার অর্জিত ফলাফলের জন্য বাবা-মা সহ শিক্ষকরাও খুশি।
বিদ্যালয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্না মিয়া ও জোসনা বেগমের ছেলে সিয়াম। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই। কিন্তু থেমে নেই তার পড়ালেখা ও খেলাধুলা। তবে পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রাথমিকের মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়ালেখা। বিদ্যালয় থেকে বেতন মওকুফ করলে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করে সিয়াম।
২০১৮ সালে ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে একই ইউনিয়নের চাপারকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। এরপর কৃতিত্বের সাথে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সিয়াম। সে এবার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিয়াম বলেন, ‘জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখতে লিখতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। এবারো এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার ইচ্ছে পড়ালেখা চালিয়ে যাবো। লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরি করবো। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাবো, দেশের মানুষের সেবা করবো।
এ বিষয়ে সিয়ামের মা জোসনা বেগম জানান, লেখাপড়ার জন্য সিয়ামকে কখনো বলতে হয় নি। নিজের ইচ্ছায় সব সময় পড়ালেখা করে। কিছু কিছু কাজ ছাড়া সব কাজ নিজেই করতে পারে। আল্লাহর রহমতে সে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছে। আরো লেখাপড়া করতে চায় ছেলে। তবে অভাবের সংসারে সামনের দিনগুলোতে ছেলেকে কিভাবে কলেজে পড়াশোনা করাবে সেই চিন্তায় খুশিও ম্লান হয়ে গেছে তাদের। সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সিয়াম অনেক ভালো ছাত্র ছিলো। এবার পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। একাদশ শ্রেণিতে এই কলেজে যদি সে ভর্তি হয় তবে তার সকল বেতন মওকুফ করে দেওয়াসহ তাকে সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন