ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক লাপাত্তা

ছবি সংগৃহীত

ঠাকুরগাওয়ে মসজিদ,মাদরাসাসহ পাকা বসতবাড়ী নির্মাণ করে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে  শামীম নামের এক প্রতারক এখন লাপাত্তা। দীর্ঘ ৯মাস ধরে পলাতক থাকা ওই প্রতারকের মোবাইল ফোনও (০১৭১৭৩৩০২৫৫) বন্ধ রয়েছে।
প্রতারক শামীমের বাড়ী ঠাকুরগাও জেলার হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গীর লেহেডোবা গ্রামে। শামীম ছাড়াও এ চক্রের সংগে স্থানীয় কিছু লোক জড়িত বলে ভুক্তভোগি পরিবাগুলো জানান।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় মসজিদ ও লিল্লাহ বোর্ডিং, রুপগন্জ জামে মসজিদ, সর্বমঙ্গলা জামে মসজিদ, বিশ্রামপুর জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও গ্রামের সহজ সরল মানুষদের পাকা বসতবাড়ী নির্মাণ করে দেওয়ার নামে জামানত হিসেবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।

বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোক্তারুল ইসলাম জানান, চক্রের সদস্য শামীম হোসেন আমাদের মাদরাসার ভবনটি চার তলা আধুনিক একটি ভবন করে দেওয়ার প্রস্তাব কথা বলে জামানত হিসেবে  দুই দফায় ৬লক্ষ টাকা পরিশোধ হাতিয়ে নেয়। শামীম টাকা হাতে পাওয়ার পর মাদরাসার সেমি পাকা বিল্ডিংটি ভেংগে দিয়ে মাদরাসার বহুতল ভবনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। এতে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচও করেন। বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসার কাজ শুরু হয়েছে এটি দেখিয়ে এলাকার অনেক মসজিদ ও মাদরাসার বিল্ডিংসহ বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার নামে ফাঁদ পাতে ওই চক্রটি। বিশ্বাস যোগ্যতা আনয়নের জন্য অনেককে বালিয়াডাঙ্গী মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসার নির্মানাধীন কাজকে দেখায়।

রুপগঞ্জ জামে মসজিদ এর সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, আমাদের নিকট হরিপুরের শামীম ও বালিয়াডাঙ্গীর মুফতি শরিফুল ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল আমরা নয় লক্ষ টাকা দিয়েছি। কিছু কাজ করার পর থেকে তাদের আর পায়া যাচ্ছে না। প্রায় এক বছর ধরে মুসল্লিরা কস্ট করে টিনের চালা দিয়ে নামাজ আদায় করেছে। এ নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে মুফতি শরিফুল ইসলামের বাকবিতন্ডাও হয়েছে।

সর্বমঙ্গলা ও বিশ্রামপুরের মসজিদগুলোরও একই রকম অবস্থা। কোন মসজিদে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে আবার কোন মসজিদের পিলার পর্যন্ত কাজ করে বাকি কাজ অসমাপ্ত রেখেই কারা লাপাত্তা হয়েছে।

জমিরিয়াহ ইয়াইয়াহুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মুফতি শরিফুল ইসলাম জানান, আমিও শামিম হোসেনের দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। জমিরিয়া ইয়াইয়াহুল উলুম মাদরাসার ভবনের জন্য ৫ লক্ষ টাকা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রীয় মসজিদ এর পেশ মোহাম্মদ হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক আবু তাহের জানান, আমরা ছাত্র নিয়ে ভালোই ছিলাম।সেমি পাকা বিল্ডিংয়েই পাঠদানে তেমন অসুবিধা হচ্ছিল না। শামীম নামের একজন লোক আমাদের অনেক অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে।সেমি পাকা বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে ভিত্তি স্থাপন করে ৯ মাস ধরে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বাচ্চাদের নিয়ে যাযাবরের মতো মসজিদের উপরে আর নিচে উঠা নামা করে বেড়াচ্ছি।অনেক সময় বাচ্চারা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করতে গিয়ে পা পিছলে পরে আহতও হচ্ছে।

ভানোর ধনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রামে দু'একটা বাড়ী করে দিয়ে শত শত মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শামীম নামের ওই ব্যক্তি ।

আমার জানা মতে, ঠাকুরগাওয়ের ৮শ ৬০ টি ঘর করে দেওয়ার জন্য প্রায় ৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা নিয়েছে। শামীম  প্রায় আট থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিদেশী বরাদ্দে তিন রুম বিশিষ্ট ছাদের পাকা বাড়ী তৈরী করে দিচ্ছিল এটা দেখে হুমরি খেয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। এতে বাড়ী প্রতি ১ লক্ষ টাকা করে জামানত নেয় শামীম। গ্রামের মানুষ গরু, ছাগল, ঘটি-বাটি বিক্রি করে টাকা জমা করে শামীমের কাছে। অনেক টাকা জমা নেওয়ার পর এক রাতে ঢাকায় অফিসে কাজের কথা বলে চলে যায়। কিছু টাকা সংগ্রহের সময় যেহেতু আমি ছিলাম সেহেতু ভুক্তভোগি পরিবারগুলো এখন আমাকে দৌঁড়ানির মধ্যে রেখেছে। সকাল হলেই তাদের চিল্লানিতে ঘুম ভাংগে আমার।

ভানোরের আজিজুল হক জানান, আমার এক জোড়া সখের পোষা গরু ছিল। ১০ মাস আগে ছাদের পাকা বাড়ীর আশায় গরু জোড়া বিক্রি করে টাকা জমা করেছিলাম।এখন ঘরও নাই, শামীম নামের ওই লোকও নাই।

ধনির হাট গ্রামের কামরুল জানান, শিক্ষক সাইফুলের কথামতো ধার দেনা করে পাকা ঘরের জন্য ১ লক্ষ টাকা জমা করেছিলাম। ঘর না পেয়েই ৯ মাস ধরে দেনার টাকা পরিশোধ করছি। ঘর না পেলে সাইফুল স্যারের কাছে টাকা আদায় করবো।

এ ব্যাপরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফছানা কাওছার জানান, প্রতারণার বিষয়টি অবগত নই।এখনো কেউ অভিযোগ করে নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন