
প্রকাশিত: ২৪ মে, ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন৷ আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে রাজশাহীর মোহনপুর ও পবা উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ৫৪ রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) সংসদীয় মোহনপুর আসন আলোচিত একটি উপজেলা। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজারের একটু বেশি। ভোট কেন্দ্র ৪৫টি। এ আসনে টানা দু’বার সংসদ সদস্য ছিলেন আয়েন উদ্দিন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ এ আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন অবহেলিত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। নির্বাচন উপলক্ষে মোহনপুর উপজেলায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। পাড়া মহল্লা, হাটে বাজারে চায়ের কাপে উঠেছে প্রচারনার ঝড়। ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো উপজেলা। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও দলীয় প্রতীক না থাকায় তৃনমূলে বাড়ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা। ভোটের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে। ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে মোহনপুর উপজেলার নির্বাচনী পরিবেশ। ইতিমধ্যেই ঘটেছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ মারধোরের ঘটনা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে সকল প্রার্থীরা লড়াই করছেন তারা কোনভাবেই মানছেন না নির্বাচনী আচরণবিধি। ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে কঠোর অবস্থানে মাঠে আছে স্থানীয় প্রশাসন।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
চেয়ারম্যান পদে যারা লড়াই করছেন তাঁরা হলেন, ঘাসিগ্রাম ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান আনারস প্রতীক নিয়ে আফজাল হোসেন বকুল, বাকশিমইল ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে আল মোমিন শাহ গাবরু, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আলহাজ্ব এনামুল হক, জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে আলমগীর মোরশেদ রনজু , উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে মেহেবুব হাসান রাসেল।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন টিউবওয়েল প্রতীক বিন বিল্লাহ, তালা প্রতীক হাবিবুর রহমান মিঠু, উড়োজাহাজ প্রতীক খোন্দকার মশিউর রহমান জুয়েল, টিয়া পাখি প্রতীক আব্দুর রউফ, চশমা প্রতীক কবির হাসান।
মহিলা ভাইস- চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন পদ্মফুল প্রতীক হাবিবা বেগম, সেলাই মেশিন প্রতীক পলি রাণী, ফুটবল প্রতীক ডলি আক্তার, প্রজাপতি প্রতীক সানজীদা রহমান রিক্তা, কলস প্রতীক রাবিয়া খাতুন সিমা।
এরই মাঝে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহা.আসাদুজ্জামান আসাদ এর আস্থাভাজন প্রার্থীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটে ফেল করতে এমপি আসাদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আল মোমিন শাহ্ গাবরুকে বিপুল ভোটে জয়ী করতে তাকে সমর্থন জানিয়ে পবা-মোহনপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন মাঠে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার (১৯ মে) সকালে উপজেলার মৌগাছি বাজারে চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের প্রচার প্রচারনা চালান তিনি। এসময় আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন, কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ, জাহানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী, ধুরইল ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, রায়ঘাটি ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু হোসেন, মৌগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বিশ্বাসের পক্ষে তার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য আলহাজ্ব শমশের আলী, ঘাসিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বাবলুর পক্ষে নেতাকর্মীসহ ছয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।
মূলত সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন ভোটের মাঠে প্রচারনায় নামায় পাল্টে যায় এ উপজেলার ভোটের সুস্থ পরিবেশ। অশান্ত হয়ে উঠে মোহনপুর উপজেলা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ ও ২১ মে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুলের সমর্থকদের গুলি করে হত্যার হুমকি ও অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় আল মোমিন শাহ গাবরু'র কাপ-পিরিচ প্রতীকের সমর্থকরা। এঘটনায় একরামুল হক বিজয়, দিদার হোসেন ভুলু, সোহেল রানা, ফিরোজসহ ২১জনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজশাহী ও রিটার্নিং অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহনপুর এবং মোহনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আফজাল হোসেন বকুল। অভিযোগ পাওয়ার পর নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেন স্থানীয় প্রশাসন। এরপর ২২ মে বুধবার উপজেলার মৌগাছি ইউপির মৌপাড়া বাজারে সন্ধ্যার পরে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা কাপ-পিরিচ প্রতিকের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৩ মে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার ধুরইল ইউপি'র লক্ষীপুর পালশা গ্রামে কাপ-পিরিচ সমর্থক লোকজন আনারস প্রতীকের এক সমর্থককে মারধোর করে। আহতের নাম আলামিন (২৬) চিকিৎসার জন্য সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানায় তার পরিবার।
সবকিছুকে ছাপিয়ে প্রচার প্রচারনায় ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে পুরো উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ এর আস্থাভাজন আনারস প্রতীকের প্রার্থী আফজাল হোসেন বকুল।
গত ১৬ মে বকুল আনারস প্রতীকের প্রচারনায় হাজারের অধিক মোটর সাইকেল শোডাউনটি পুরো উপজেলায় আনারস প্রতীকের জনপ্রিয়তা জানান দিয়েছে। জনতার প্রার্থী হিসেবে আফজাল হোসেন বকুলের পক্ষে দিন দিন বাড়ছে জনমত ও ভোট। ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় সমর্থক ও ভোটারদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন আফজাল হোসেন বকুল।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় কিন্তু পিছিয়ে নেয় কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আল মোমিন শাহ গাবরু। নেতা কর্মীদের সাথে পেছনে টাকা খরচের পাশাপাশি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। জয়ের ব্যাপারে তিনিও শতভাগ আশাবাদী। তিনি তার সমর্থকদের বিষয়ে আফজাল হোসেন বকুলের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব এনামুল হক বাকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান ও বাকশিমইল ইউপি আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দুলালকে সাথে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তার ভোটের নির্বাচনী প্রচারণা। তিনি ভোটে জেতার ব্যাপরে আশাবাদি।
অনেকেই বলছেন আগামী ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে লড়াই হবে তৃমুখী। বর্তমান সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন আনারস প্রতীকের প্রার্থী আফজাল হোসেন বকুল ও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ঘোড়া প্রতীক আলহাজ্ব এনামুল হকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন মনোনীত কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আল মোমিন শাহ গাবরু'র।
ভোটের মাঠের অভিজ্ঞতা আছে এমন অনেক অভিজ্ঞজন মনে করেন, আফজাল হোসেন বকুলের সাথেই হবে আল মোমিন শাহ গাবরু'র মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা। তবে বাকশিমইল ইউনিয়ন হতে তিন প্রার্থী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করায় দিন দিন কমতে শুরু করেছে কাপ-পিরিচ প্রতীকের ভোট বলছেন স্থানীয় ভোটাররা।
অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে গত ১০ মে শুক্রবার জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি মোটর সাইকেল প্রতীক আলমগীর মোরশেদ রনজু দেড়'শ মোটর সাইকেল ও ৭৫টি চার্জারভ্যান ও ভুটভুটি নিয়ে পুরো উপজেলায় তার ভোটের সক্ষমতার জানান দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সমর্থকদের নিয়ে রাত দিন এক করে তার ভোট চাইছেন।
১৯মে রোববার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী মেহেবুব হাসান রাসেল প্রায় ৫'শ মোটরসাইকেল নিয়ে পুরো উপজেলায় শোডাউন করে জনগণের দোড়গোড়ায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সেও তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রার্থীরা তাদের ভোটের নিজ নিজ অবস্থান শক্ত করছেন। ইতিমধ্যেই প্রার্থীরা তাদের বিভিন্ন ইউনিয়ন পৌরসভায় তাদের ভোট ক্যাম্পিং অফিস স্থাপন করেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিন বিল্লাহ ও হাবিবুর রহমান মিঠুর মধ্যে লড়াই এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা, ডলি ও পলি রানীর মধ্যে হবে তৃমুখী লড়াই ভোটের মাঠ ঘুরে এমনই আভাস দিয়েছেন ভোটাররা।
ভোটের মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচনি সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। নির্বাচনি এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে।
ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটযুদ্ধে হবে তৃমূখী লড়াই৷ কে হবেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ নিয়ে চলছে জটিল সমীকরণ। ক্ষতার লড়াইয়ে এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ এর আস্থাভাজন বকুল নাকি সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন এর প্রার্থী গাবরু এ নির্বাচনী যাত্রায় জয়ী হবেন। তা এখন সাধারণ ভোটারদের দেখার পালা।
মন্তব্য করুন