
প্রকাশিত: ৩১ মে, ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় যোগ দিতে উপজেলা চত্বরে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। সাংবাদিকের প্রশ্নে রেগে গিয়ে মন্তব্য করায় আবারো ভাইরাল হলেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর
ফারুক চৌধুরী। গোদাগাড়ী উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভা ছিল বৃহস্পতিবার (৩০ মে )। ওই সভায় যোগ দিতে এসে সেখানে লোকজনের জমায়েত দেখে জমায়েতের কারণ জানতে চান সংসদ সদস্য।
সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাঁকে আমি দুইবার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হঠাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি না আই ডোন্ট নো। বাট তাকে আমি দুইবার রিকোয়েস্ট করেছি এইগুলোকে হঠানোর জন্য।’
এ সময় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি সাংবাদিক রফিকুল ইসলামের করা এক প্রশ্ন শুনে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী রেগে গিয়ে জবাবে তিনি বলেছেন, ‘তোমার প্রবলেম হলো তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’ এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর এমন মন্তব্যের সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগের প্রমাণ করার জন্য তাঁর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তা না হলে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন। সাংবাদিকদের এমন তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান এমপি ফারুক। বৃহস্পতিবার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর এমপির মন্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল শপথ নেওয়ার পর প্রথম তাঁর অফিসে যান দ্বায়িত্ব গ্রহন করতে। বেলাল উদ্দিন সোহেলের দ্বায়িত্ব গ্রহন ও প্রথম কর্মদিবসেই উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা ছিল। এ সভায় যোগ দিতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীও যান সেখানে। বেলাল উদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহনের দিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা।
এদিকে, দায়িত্ব গ্রহন ও প্রথম কর্মদিবসে বেলা ১১টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে তাঁর কয়েকশো কর্মী-সমর্থক যান উপজেলা চত্বরে। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে তার কর্মী-সমর্থকদের বের করে দেন। ইউএনও নিজেই হ্যান্ডমাইকে বার বার নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন। তবে এর পরও সেখানে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক থেকে যান।
এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান ও ৩০-৪০ জন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে আসেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এসেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাঁকে আমি দুইবার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হঠাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি না আই ডোন্ট নো। বাট তাকে আমি দুইবার রিকোয়েস্ট করেছি এইগুলোকে হঠানোর জন্য।’
সাধারণ জনগণ কী একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে প্রথম দিন আসতে পারে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সাথে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না।’
এ সময় কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সঙ্গেও অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন?’
এ প্রশ্ন শুনেই রেগে যান এমপি ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রবলেম হলো- তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড। ’সাংবাদিকরা এ সময় বলতে থাকেন, ‘আপনি এটা খারাপ বললেন। আপনার কথাটা ঠিক নয়। এমন কথা বলার জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
এ সময় ফারুক চৌধুরী প্রতিবাদ করতে থাকা দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিনের নাম ধরে বলেন, ‘আমি তোমাকে এ কথা বলি নাই। যে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি তাঁকে বলেছি।’ তখন সাংবাদিকরা বলতে থাকেন, ‘উনি আমাদের সভাপতি। আপনি একজন সাংবাদিককে এ কথা বলতে পারেন না। আপনাকে স্যরি বলে যেতে হবে। আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না।’সাংবাদিকদের তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে চলে গিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে চলে যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যাকে তাকে যখন তখন অপমানজনক কথা বলেন। তিনি কিছুদিন আগেই নিজের এলাকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়েছেন। তাঁকে অত্যন্ত যৌক্তিক একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রেক্ষিতে যে কথা বলেছেন তা সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক।’
উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ঘটনার সময় তিনি ভেতরে ছিলেন। বাইরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘নতুন একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নিতে গেলে তাঁর সঙ্গে অনুসারীরা প্রথম দিন গিয়ে থাকেন। এ জন্যই মানুষ ভালোবেসে আমার সঙ্গে এসেছিল। কেউ এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসেননি। এ রকম কেউ চিন্তাও করে না।’
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলনে, সমন্বয় কমিটির সভার নিউজ সংগ্রহ করতে শহর থেকে তিনটি মাইক্রোবাসে করে সাংবাদিক যান। সমন্বয় কমিটির সভায় এত সাংবাদিক এটা স্বাভাবিক না। আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার এটা একটা উদ্যোগ বলে আমার মনে হয়েছে। না হলে একটি মাসিক সমন্বয় সভায় রাজশাহী শহর থেকে তিন মাইক্রোবাস সাংবাদিক নিয়ে যাওয়ার কি এমন কারণ থাকতে পারে? তারা এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে যেন আমি একটা কিছু বলি বা করি বা আমার সমর্থক যদি আমি নিয়ে যেতাম তাহলে বিশৃংখলার সৃষ্টি হতো এবং তারা এই সমস্ত সাংবাদিক সাহেবদেরকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটা বিশাল প্রোপাগান্ডা করতে পারত।
এরকম একটা সম্ভাবনা বা চিন্তা ভাবনা থেকে আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার অসৎ উদ্দেশ্যে তারাই সমাবেশ করে এবং এ সাংবাদিকদের কে নিয়ে আসে। বারবার আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। আমি এ বিষয় নিয়ে থানায় জিডি করেছি। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনটি মাইক্রোবাস, এটি তাদের কে দিয়েছে সেটাও ভাবার বিষয়।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের চেতনা বিরোধী,আদর্শ বিরোধী মানুষের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে কোনো অসাধু উদ্দেশ্যে, এটার ইনভেস্টিগেশন হওয়া দরকার। এত লোকের উপস্থিতি, এত লোকের গাড়ি ভাড়া কে দিয়েছে, কেন দিয়েছে, এ পেছনে উদ্দেশ্য কি।
তিনি বলনে, এটা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একটা ঘটনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়েছে। এর নেপথ্যে কারা আছে, সেটি বের করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশ’ করার সঙ্গে ইউএনওর সম্পৃক্ততা থাকার
ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোন কথা বলতে চাননি ইউএনও আতিকুল ইসলাম।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এমপি সাহেব কী বলেছেন তা শুনিনি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইউএনও আতিকুল ইসলাম ভাল কাজ করছেন। স্থানীয় রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর একজন সংসদ সদস্যকে যে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা আছে তা গোদাগাড়ীর ইউএনও দিচ্ছেন এবং আগামীতেও দিয়ে যাবেন।’
মন্তব্য করুন