এনামুল হক

প্রকাশিত: ৪ জুন, ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

নির্দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চায় সুজন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় প্রতীকে করার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। আজ মঙ্গলবার সুজন আয়োজিত ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলভিত্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এই নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হওয়া উচিত। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন
নির্দলীয় ভিত্তিতে করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইন পরিবর্তন করে সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হোক, অর্থাৎ মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে পৃথক নির্বাচন না করে প্রথমে সকলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাউন্সির বা সদস্য নির্বাচিত হবেন এবং
পরবর্তীতে নির্বাচিতদের মধ্য থেকেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মেয়ার বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনও সাধারণ ভোটারদেও ভোটে সংসদীয় পদ্ধতিতে আয়োজনের দাবি জানায় সুজন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে নির্বাচন হচ্ছে তা নির্বাচনের মতোই মনে হয় না। নির্বাচনে যেই রকম উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে তার কিছুই নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া কাঁচা দাঁত তোলার মতোই। কাঁচা দাত তুলতে যেমন কষ্ট
হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য পেতে তেমনই কষ্ট পেতে হয়।

তিনি বলেন, দেশে নাই নাই নাইয়ের নির্বাচন হচ্ছে। ভোটার নাই, বিরোধী দল নাই, অনেকক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাই। এটি নাইয়ের নির্বাচন। নির্বাচনটা নির্বাসনে চলে গেছে তারই অবস্থা এটার মূল কারণ হচ্ছে আস্থাহীনতা। নির্বাচনী অবস্থা ভেঙ্গে গেছে। তাই এই
ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান

নির্বাচন অনুষ্ঠান করে পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে তাদের প্রতিও আস্থাহীনতা রয়েছে। আস্থাহীনতার কারণে বিরোধী দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমরা ভোট পাগল জাতি। এখন ভোট খড়ায় ভুগছি। আমরা ভোট পাগল থেকে ভোট খড়ার জাতিতে পরিণত হয়েছি। নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে।

শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাসনেই যায়নি, আমি বলব নির্বাচন-ই নাই। নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছু লোক দেখানো অনুশীলন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ৩৫-৩৬ শতাংশ ভোটের কথা বলা হলেও মনে হয় না জনগণ এতে বিশ্বাস রাখতে পারছে। নির্বাচন উঠে গেছে। লোক
দেখোনো এক্সারসাইজ করছি। তার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে এই নির্বাচন।

তিনি বলেন, আমরা সামরিক শাসকের অনেক সমালোচনা করি, কিন্তু সামরিক শাসকরা যে স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছে তা এখনো আকড়ে ধরে আছি। স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা এখনো চালু রাখা হয়েছে।

জমিদারিত্ব প্রথা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নাই। এরই কারণে মন্ত্রী, এমপিদের স্ত্রী, কন্যা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা নির্বাচন করছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জমিদারিত্ব তৈরি করা হচ্ছে। এখন স্থানীয় সরকার আছে নামকাওয়াস্তে আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন এতে সভাপতিত্বে সংসদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন প্রধান কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে
দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। প্রশ্ন হলো কেন দলটি দলীয় প্রতীক ছাড়া এই নির্বাচন করছে? ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগে থেকেই ভেবেছিলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ তাদের সমমনা দলগুলো এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করবে না। সেক্ষেত্রে ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই অধিক সংখ্যক প্রার্থী যেন নির্বাচনে অংশ নেয়; প্রার্থী বেশি থাকার কারণে ভোট যেন বেশি পড়ে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আগ্রহী নেতৃবৃন্দ যেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়, নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে
স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় বিভাজন যেন দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান না হয় ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশল নিয়েছে। বেশিরভাগ উপজেলাতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। বর্তমানে যে ধারায় নির্বাচন চলছে তা আদৌ নির্বাচন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

৪৫৯টি উপজেলার ১ হাজার ৮৭৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে উ”চ শিক্ষিতের (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) শতকরা হার ৫৬ দশমিক ১৯% (১ হাজার ৫৩ জন)। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম না করা প্রার্থীর শতকরা হার ১৪ দশমিক ৩৫% (২৬৯ জন)। এর মধ্যে স্বশিক্ষিত রয়েছেন ১৬০ জন। ১ হাজার ২৬৮ জন (৬৭ দশমিক ৬৬%) ব্যবসায়ী। প্রার্থীর মধ্যে ৩৮৫ জনের (২০ দশমিক ৫৪%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৬০৭ জনের (৩২ দশমিক ৩৯%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২১০ জনের (১১ দশমিক ২১%) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৫২৬ জন (২৮ দশমিক ০৭%) ঋণ গ্রহীতা। প্রথম তিন ধাপে ৩৮২ উপজেলায় ভোট হয়েছে। এতে ৮৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিজয়ী হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৩৩৪, বিএনপির বহিস্কৃত স্বতন্ত্র ১৬ জন বিজয়ী হয়েছেন।

মন্তব্য করুন