
প্রকাশিত: ১০ জুন, ২০২৪, ০১:০৫ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
আবু খালেদ বুলু। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতির পদে আছেন। একই সাথে দুটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদও নিজের দখলে নিয়ে আছেন। তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম করেন শিক্ষকতা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আবার স্কুলে না এসেই বেতন তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য এসব কিছু ক্ষমতার জোরে। বলছেন স্থানীয় ও কর্তব্যরত একাধিক শিক্ষকেরা। তারা মুখ ফোটে কিছু না বললেও ঈশারায় এমনটাই বোঝালেন।
বলছি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ভান্ডারপুর সাবিত্রি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কোলা বিজলী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ভান্ডারপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২২ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে আছেন আবু খালেদ বুলু। একই ভাবে প্রায় দুই যুগ ধরে সভাপতির দায়িত্বে আছেন ১৯৯৭ সালে স্থাপিত ভান্ডারপুর সাবিত্রি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর স্থানীয়দের ভাষ্য তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম মুক্তা মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর অনুপস্থিত তার কর্মস্থল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোলা বিজলী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
১৯৬৪ সালে এলাকার কিছু কৃতি সন্তানের উদ্যোগে কোলা বাজারে প্রতিষ্ঠিত ওই বিদ্যালয় প্রায় ১৫ বছর আগে ফাতেমা বেগম সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োগ পায়। আর তখন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক। সেই সময় তার স্বামী আবু খালেদ বুলু ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এখন তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমের স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের যোগ সাজশে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন তুলছেন। যেটা নিয়মবহির্ভূত। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মাসের পর মাস স্কুলে উপস্থিত না থেকেও বেতন তুলছে কিভাবে?
এদিকে ফাতেমা বেগমের হয়ে শিক্ষকতার প্রক্সি দিচ্ছেন অপর এক নারী। বিষয়টি গত শনিবার (১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে কর্তব্যরত শিক্ষকের কাছ থেকে জানা যায়। এবং ফাতেমা বেগম স্কুলে আসেননি।
জানতে চাইলে কোলা বিজলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রার্থ কুমার মন্ডল বলেন, আজকে স্কুলে আসার কথা ছিল। কিন্তু ফোনে অসুস্থতার কথা জানিয়ে স্কুলে আসেননি তিনি।
শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকে বেতন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তার পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, অসুস্থতার জন্য সে গত দুই তিন মাস থেকে অনুপস্থিত। তবে ছুটির আবেদন নেই, মৌখিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবগত আছেন। আমি কয়েক দিন হলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছি। তবে সে এখন থেকে স্কুলে নিয়মিত আসবে। রবিবার (৯ জুন) মুঠোফোনে জানতে চাইলে সেদিনের পর থেকে ওই শিক্ষিকা নিয়মিত স্কুলে আসতেছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু দলের প্রভাব খাটিয়ে ভান্ডারপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাবিত্রী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২যুগ ধরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে এই দুই বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে সমালোচনা।
বক্তব্য জানার জন্য সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমের (০১৭৩....৪০৫২) মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কোলা বিজলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোনে জবাব দিতে পারেননি।
দুই যুগ ধরে দুই স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু মুঠোফোনে বলেন, বিএনপির সময় শুধু দুই টার্ম সাবিত্রি বালিকা উচ্চ বিদ্যালযের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম না। তখন তারা একই সাথে দুই স্কুলে থাকা যাবেনা বলে একটা আইন করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই আইন আবার বাতিল হয়েছে। একটা প্রজ্ঞাপন আছে। তাই আমি দুই স্কুলের দায়িত্ব পালন করছি। তবে শিক্ষার মান ভালো আছে বলে তিনি দাবি করেন।
একই সাথে দুই স্কুলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা যায় কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম মুঠোফোনে বলেন, সরকারি বিধি থাকলে বোর্ড সেই কমিটি পাশ করে দেয়। এটার নিয়ম থাকতে পারে।
আর দুই যুগ ধরে দায়িত্বে থাকতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জানিনা, তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি দেখা হবে। আর শিক্ষিকার স্কুলে না এসে বেতন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে একইভাবে লিখিত অভিযোগের কথা জানালেন। পাশাপাশি ম্যানেজিং কমিটি বিষয়টি দেখেন বলেও দায়সারা জবাব দিলেন। তারপরও আশার বানি শোনালেন অভিযোগ দিলে বিষয়টি দেখবেন।
মন্তব্য করুন