
প্রকাশিত: ২৬ জুন, ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
রংপুরের সুমিষ্ট আম হাঁড়িভাঙা। এই আমের আবিস্কার ও সম্প্রসারণ শুরু হয় মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে। অবশ্য আঁশবিহীন এই আম এখন রংপুরের পাশ্ববর্তী উপজেলাতেও চাষাবাদ হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় মিঠাপুকুরে। জেলার বাগানগুলোর প্রাকৃতিক দৃশ্য মন কাঁড়ছে পথচারীদের।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা পরিপক্ক ‘হাঁড়িভাঙা’ আম গত ২০ জুন থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইন মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন হাট-বাজারে মিলছে সুস্বাদু এই আম। চলতি বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বৃকীতি পাওয়া হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে রপ্তানি শুরু হয়েছে। ২০০ কেজি আম দিয়ে রপ্তানি শুরু হলেও খুব শিঘ্রই নেপাল ও থাইল্যান্ডে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে এই আম।
এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করে হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্য হয়েছে তা বেশি বেশি করে প্রচার করার আহবান জানিয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন। অবশ্য গত প্রায় ৫ বছর থেকে হাঁড়িভাঙা আম সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, ব্রুনাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে হাঁড়িভাঙা আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুমান ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন রংপুরের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। সেখানে তিনি হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকার গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাওসার আহমেদ স্যাম্পল হিসেবে ২০০ কেজি হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে পাঠিয়েছেন। জার্মানি আরও আম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সেটি নির্ভর করবে ওই দেশের ক্রেতাদের চাহিদার উপর। প্রথম দফায় জার্মানিতে পাঠানো আমগুলো মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকার কৃষক মো. খলিলুর রহমানের বাগান থেকে সরবরাহ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আমের দাম কিছুটা চড়া হলেও হাঁড়িভাঙার স্বাদ নিতে ক্রেতাদের কমতি নেই হাঁড়িভাঙার হাট-বাজারে। এই আম ঘিরে চাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে আকারভেদে প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আম ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর শুধু মিঠাপুকুর উপজেলায় মোট ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বাগান থেকে ২৬ হাজার মেট্টিক টন আম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় দেড়শো কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক ও জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক আব্দুস সালাম সরকার জানান, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় আমের আকার কিছুটা ছোট হয়েছে। অন্যান্য বছর ২ থেকে ৩টি আমে এক কেজি হলেও, এবার লাগবে ৫ থেকে ৬টি।
খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নুর আলম জানান, জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার বসে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ হাটে। আমকে ঘিরে সবদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে। হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদন করে মিঠাপুকুরের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। আধুনিক চাষাবাদে পাল্টে গেছে কৃষি ও কৃষকের জীবনচিত্র।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন জানান, কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ আম বাজারজাতকরণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি অফিস প্রকল্প নিয়েছে। পাঁচ একর আয়তনের বাগান মালিককে উৎকৃষ্ট আম উৎপাদনে প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি অফিস থেকে আম বাগানে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। অত্যন্ত সুস্বাদু, আঁশবিহীন ও ছোট আঁটির হাঁড়িভাঙ্গা আম দেশের চাহিদা পুরণ করে বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গার পাশাপাশি মিঠাপুকুর উপজেলায় বারি-৪, আম্রপলি, কপিলবাংড়ি, সাদা, ন্যাংড়া, ফজলি, কুয়া পাহাড়িসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হচ্ছে। দিনকে দিন নতুন নতুন জাতের আমের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে এই উপজেলায়।
মন্তব্য করুন